প্রধানমন্ত্রীকে এবিএম মূসা-যাদের নতুন চ্যানেল দিয়েছেন তারা কোথায় টাকা পেলেন?

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ এই সাংবাদিকের নাম উচ্চারণ না করে তার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক ব্যাখ্যায় এবিএম মূসা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, আমি কি চ্যানেলের জন্য কি টাকা চুরি করবো না করেছি। একটি পাল্টা প্রশ্ন করার স্পর্ধা দেখাচ্ছি, প্রশ্নটি হচ্ছে- তার সরকার যে ক’টি নতুন চ্যানেল প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আমার ‘একাত্তর’ নামটিসহ একজনকে দিয়ে দিয়েছেন। তারা কোথায় টাকা পাবেন, বা পেয়েছেন? তারা কি চুরি করেছেন না করবেন? তিনি অবশ্যই জানেন, এসব চ্যানেলে তার সরকারের প্রচুর সমালোচনা করা হয়। শুধু তাই নয়, এগুলোর অধিকাংশই সরকার বিরোধী পক্ষের ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে এবিএম মূসার পুরো প্রতিক্রিয়া
আমি আমি একটুখানি আত্মপ্রসাদ লাভ করেছি। মনে মনে গর্ববোধও করছি। কারণটি হলো, ভাল হোক মন্দ হোক দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিক সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দেয়া মন্তব্যটি ছিল আমার একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য আবেদন সম্পর্কীয়। বিনীতভাবে তাঁর স্মরণার্থে ও সাধারণভাবে যেসব গণমাধ্যম সেটি প্রচার করেছে, তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য পেশ করছি-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু করার এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি কি এ জন্য চুরি করেছি অথবা করবো? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তিনি জানতেন এই চ্যানেলটির উদ্যোক্তা ল্যাবএইড মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড (ল্যাবএইড গ্রুপ)। সেখানে আমাকে মাত্র দশ শতাংশ অংশীদারিত্ব দিয়ে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। আমি সেই সুবাদে চ্যানেলটির জন্য আবেদন করি।
পরবর্তীতে আমি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চ্যানেলটি দেয়ার বিষয়টি আলোচনা করি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নয়, মুজিব ভাইয়ের কন্যাকে আমি কিছু ক্ষুব্ধ এবং উতপ্ত ভাষায় অনুযোগ জানাই। তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেননি চ্যানেল করার টাকা আমি কোথায় পাবো? কারণ তিনি জানতেন ল্যাবএইড গ্রুপ এই চ্যানেলের উদ্যোক্তা এবং সম্পূর্ণ অর্থ যোগানদাতা। আমাকে উত্তেজিত দেখে হাসিমুখে তিনি তার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদকে বললেন, ‘উনি খুব ক্ষেপে গেছেন। ওনাকে শারম আল শেখে (ইজিপ্টে ন্যাম সম্মেলনে) নিয়ে চলো। ওখানে সমুদ্রপাড়ে ওনার মাথা ঠান্ডা হবে। তারপর ফিরে এসে ওনার চ্যানেলের ব্যাপারটা দেখা যাবে।’ আমি এতে চ্যানেল পাওয়া নিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে সফরসঙ্গী হতে রাজি হলাম। বিমানে আসা যাওয়ার পথে আমি, দীপুমনি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বসেছি। খাওয়া-দাওয়া ও নানা বিষয়ে গল্প গুজব করেছি কিন্তু আমার চ্যানেল পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা বলিনি।
তারপরও আমার প্রার্থিত চ্যানেলটি যখন দেয়া হলো না, তখন একদিন আমার বন্ধু আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকায় এলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে অনুরোধ করলাম। পরে গাফফার আমাকে জানালো, প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ওনার পেছনে কে, অর্থাৎ পরোক্ষে কে অর্থ যোগান দিচ্ছে? তার মানে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে এমনটি মনে হলো। অত:পর তিনি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে ডেকে বললেন, আমাকে যেন অন্য কোন চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। আজাদের বাড়িতে এ নিয়ে চ্যানেল পাওয়া একজন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠকও হলো। কিন্তু আমি আমার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বেঈমানি করতে চাইনি। তাই সেই বৈঠক ব্যর্থ হলো।
আমার মনে হলো চ্যানেলটির উদ্যোক্তা ড. শামীমের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বিরূপ মনোভাব রয়েছে। অথচ কিছুদিন পরে ডা. শামীমের আয়োজনে একটি কার্ডিয়াক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে তার পাশে বসেছিলেন (২৫শে নভেম্বর ২০১১-তে)। ব্যাপারটি আমার কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, আমি চ্যানেলের জন্য কি টাকা চুরি করবো না করেছি। একটি পাল্টা প্রশ্ন করার স্পর্ধা দেখাচ্ছি! প্রশ্নটি হচ্ছে- তার সরকার যে ক’টি নতুন চ্যানেল প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আমার ‘একাত্তর’ নামটিসহ একজনকে দিয়ে দিয়েছেন তারা কোথায় টাকা পাবেন, বা পেয়েছেন? তারা কি চুরি করেছেন না করবেন? তিনি অবশ্যই জানেন, এসব চ্যানেলে তার সরকারের প্রচুর সমালোচনা করা হয়। শুধু তাই নয়, এগুলোর অধিকাংশই সরকার বিরোধী পক্ষের ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.