‘যিনি নিজেকেই বাচাল বলেন তার মিডিয়া চেয়ারম্যান থাকার অধিকার নেই’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, যিনি নিজেকেই বাচাল বলেন-- তার কোনো মিডিয়ার চেয়ারম্যান থাকার অধিকার নেই। দু’টি মিডিয়া থেকেই তাকে সরিয়ে জনগণের মিডিয়া হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

সাগর-রুনির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লন্ডনে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেফতারের দাবিতে রোববার আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
একই সময় এ দুটি চ্যানেলে যে সকল সাংবাদিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

রোববার বেলা ১১টায় কাওরানবাজারস্থ এটিএন বাংলার সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সাংবিধানিকভাবে আমাদের অধিকার রক্ষায় সবকিছু করতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সাগর-রুনির হত্যাকারী ধরা না পড়বে, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্টা না হবে, জুলুম-অত্যাচার-হামলা-মামলা বন্ধ না হবে ততক্ষন আমরা আন্দোলন করবো। আর এই জন্য কোনো আদালত আমাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

এসময় তিনি ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির খুনীরা গ্রেফতার না হলে ২৬ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আমরা বলিনি কে খুনী, আমরা বলেছি খুনীদের মুখে যে রকম কথা শোভা পায় সেই রকম কথা কারওয়ানবাজার থেকে শুনেছি। সে হিসেবে খুনীরা সম্ভবত কাওরানবাজারে থাকে। আদালত আমাদের এই সকল কথা বলতে নিষেধ করেছে। ১৯৭১ সালে আদালতের কথায় তো যুদ্ধ করিনি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি জড়িত থাকে তবে তাদের কর্ণধারদের গ্রেফতার করতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ তার বক্তৃতায় বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলায় খুনীদের ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। এছাড়া সাংবাদিকদের দাবি দাওয়া পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম। সরকার আমাদের সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা এটিএন বাংলার সামনে সমবেত হয়েছি, তার একটাই কারণ, মাহফুজুর রহমানের কাছে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো প্রকাশ যেনো করা হয়।

হত্যাকারীদের বাঁচাতে একটি মহল হীন চেষ্টায় লিপ্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবেশ থেকে মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ‘প্রকৃত হত্যাকারীদের’ বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, বিএফইউজে’র অপর অংশের সভাপতি  রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক, ডিইউজে’র অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ, কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যমের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ জোড়া খুনের কোনো কিনারা করতে পারেনি।

সর্বশেষ এ মামলার আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাঠানো হয়। সাংবাদিক নেতারা ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.