আইআইএসএসের প্রতিবেদন-যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব কমেছে

আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যকেই পাল্টে দিয়েছে। বিশ্বের ওপর এককভাবে ছড়ি ঘোরানোর যে অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র ছিল, তা অনেকটাই খর্ব হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (আইআইএসএস) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।


'স্ট্র্যাটেজিক সার্ভে ২০১২ : দ্য অ্যানুয়াল রিভিউ অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স' এই শিরোনামে বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইআইএসএস। প্রতিষ্ঠানটি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে, ২০১১ সালে আরব গণজাগরণ শুরুর আগে যত বেশি পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের আশা করা হয়েছিল, ক্ষমতার পরিবর্তন আসার পর তার মোহ কিছুটা কমে গেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ইসলামপন্থী দলগুলো সাবেক স্বৈরশাসকদের স্থান দখল করে নিতে পারে বলেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, চীনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিবর্তন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার ক্ষমতার পালাবদলের ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'গত বছর হতবাক করে দেওয়ার মতো পরিবর্তন আসে। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি নাগাদ অনেকেরই মোহমুক্তি ঘটে। আরব বিশ্বেই এ ধরনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে ভবিষ্যতে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য লড়াইরত ইউরোপ, ভ্লাদিমির পুতিনকে পুনর্নির্বাচিত করার পর রাশিয়া ও নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়াধীন চীনেও একই মনোভাব দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো অন্য দেশে হস্তক্ষেপের যুগ ও নতুন ভূমিকার মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে।' মিসরে স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের পতনের পর ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্টের পদে আসেন। এই ঘটনাকে ইসলামপন্থী দলগুলোর রাজনৈতিক অনিরাপত্তার সুযোগ গ্রহণের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে আইআইএসএস। ইসলামপন্থীদের উত্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে এবং ইসরায়েল আরব প্রতিবেশীদের ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করে তারা।
বার্ষিক প্রতিবেদনে আইআইএসএস আরো জানায়, সংকট সমাধানের দিকনির্দেশনার জন্য আরব নেতারা এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কমই নির্ভর করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট কর্তন এবং ইরাক যুদ্ধ থেকে নেওয়া শিক্ষার কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 'এই পরিস্থিতি সাময়িক হতে পারে। তবে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের কম হস্তক্ষেপ কামনা করে। আমেরিকা তার সামরিক পদচারণ সংকুচিত করে আনছে এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় কমাচ্ছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান মিট রমনির কাছে অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই মূলত প্রাধান্য পাবে।' সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.