চরাচর-একাত্তরের বিশ্ব বিবেক জাগরণের পদযাত্রা by ফখরে আলম

বাংলাদেশকো স্বাধীন ক্যারো। শেখ মুজিবকো রেহা ক্যারো। বাংলাদেশকো ম্যান্নেতা (স্বীকৃতি) দেনে হোগি।' ১৯৭১ সালে বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রায় অংশ নেওয়া যশোরের ছাতিয়ানতলার তুষার কান্তি সুর যখন এ কথা বলেন, তখন একাত্তরের দামামায় উজ্জীবিত হন অনেকেই।


সম্প্রতি যশোর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে তুষার কান্তি সুরের মতো ঐতিহাসিক পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ভারতের মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে লক্ষ্নৌ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করার পদযাত্রার অভিজ্ঞতা স্বাধীনতার ৪১ বছর পর তুলে ধরলেন। ১৯৭১-এর ১৫ অক্টোবর শুরু হওয়া দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটারের ওই লংমার্চের তিনটি দাবি ছিল। (১) বাংলাদেশের স্বীকৃতি (২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি (৩) বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধ করা। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের ৩৮ জন মুক্তিকামী যুবক ওই লংমার্চে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সহযোগিতায় তাঁদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্মিলনীতে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া বর্তমানে ২২ জন প্রবীণ একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে একাত্তরের সাহসী তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান। সে দিনের লংমার্চের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। লংমার্চের ডেপুটি লিডার খুলনার আকরামুল ইসলাম বলেন, 'প্রথম দিকে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করা হতো। বিহারের পাটনায় বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য অবাঙালিরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ, আর্মি আমাদের রক্ষা করে। তখন আমরা হিন্দি ভাষায় বক্তব্য রেখে তাদের আমাদের পক্ষে নিয়ে এসেছি। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা দেশের জন্য মাইল মাইল পথ হেঁটেছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা মুক্তিযোদ্ধা নই। একাত্তরে যারা ফুটবল খেলেছে, গান গেয়েছে তারা মুক্তিযোদ্ধা হলেও তালিকায় আমাদের নাম নেই।' যশোরের ছাতিয়ানতলার তুষার কান্তি সুর বলেন, 'আমরা লংমার্চে খান সেনাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছি, স্যারে বাংলাদেশকা সবি মোকানকো আগ জ্বালা দিয়া। মাওকা গোদছে (মায়ের কোল থেকে) বাচ্চাকো পাকড়ালিয়া মাকো সামনে মার ডেলা। আমরা খান সেনাদের অত্যাচার-নিপীড়নের কথা বর্ণনা করে তিনটি দাবি পেশ করেছি। লংমার্চের সময়কালের মধ্যে ভুটান, ভারত, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। পরে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও মূল্যায়ন করা হয়নি।' মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের কর্মী রণজিত কুমার বলেন, 'পদযাত্রার এই সৈনিকদের আমরা খুঁজে বের করেছি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পদযাত্রায় অংশ নিয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলেছেন, বিদেশি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করেছেন, কিন্তু এই সূর্যসন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
ফখরে আলম

No comments

Powered by Blogger.