মূল্যবোধ-মানবিকতা তবে নির্বাসনে?

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত যে কিশোরের খবর মঙ্গলবারের সমকালে ছাপা হয়েছে, নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি তার ভাগ্যকেও নিশ্চয়ই দোষারোপ করা চলে। প্রকৃত হতভাগ্য বোধহয় আমরা সবাই। এর কারণ এই নয় যে, গতির দোহাই দিয়ে প্রকৃতিপ্রদত্ত নৌপথের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করে গড়ে তোলা সড়ক-জাল আমাদেরই গলার ফাঁস হয়ে উঠেছে। যানবাহন ও যাত্রী বেড়েছে, বাড়েনি নিরাপত্তা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা।


নাগরিক সচেতনতার কথাও এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে। কিন্তু উত্তরা এলাকার এই দুর্ঘটনা আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অন্য এক প্রশ্নের মুখোমুখি। আমরা জানি, চলার পথে দুর্ঘটনা যেমন, দুর্ঘটনার পর এর শিকার মানুষকে উদ্ধার ও সেবাও মানবীয়। কখনও কখনও ঝামেলা এড়াতে কেউ কেউ এড়িয়ে যান বটে; লাশের ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার দানবীয় নজির এর আগে দেখা যায়নি। জানা যাচ্ছে, ওই কিশোর রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ির ধাক্কায় পড়ে গেলে, তার রক্তাক্ত দেহের ওপর দিয়েই দ্রুতগামী সব যানবাহন চলতে থাকে। পুলিশ এসে ছিন্নভিন্ন দেহ জড়ো করে মর্গে পাঠায়। দুর্ঘটনার পর 'লাশ' মহাসড়কে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমরা আগেও দেখেছি; তবে সেটা মানুষের নয়। রাস্তা পার হতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ দেওয়া কুকুর-শৃগালের এমন পরিণতি নিয়ে আমাদের ভাবনা ক্ষণিকের। নাক চেয়ে ওই স্থান পার হতে যতক্ষণ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিহত কিশোরের লাশের মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে কিন্তু আমাদের গভীরভাবে ভাবতেই হবে। মানুষ মানুষের জন্য_ এই আপ্তবাক্য প্রায়োগিক ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ হতে পারে, মিথ্যা হতে দেওয়া যাবে না। মনুষ্যত্বের স্বার্থেই এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আইন ও এর প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। আর কী প্রয়োজন, সেই উত্তর আমাদের কালের রাষ্ট্র ও চিন্তার নায়কদের কাছে থাকতে হবে। কালের বিবর্তনে সমাজ ও সংস্কৃতি বদলে যেতে পারে; মানবিকতা শাশ্বত। মানবিকতা নির্বাসনে গেলে বাকি থাকে শুধু দানবিক ধ্বংস ও হাহাকার।

No comments

Powered by Blogger.