দরপতন অব্যাহত, বিক্ষোভও চলছে

দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন নতুন সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাবে গতকাল বুধবারও বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভে গতকালও উত্তাল ছিল রাজধানীর মতিঝিল এলাকা। লেনদেন শুরুর আগেই গতকাল সকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সংবাদ সম্মেলন করে পুঁজিবাজারের সব গুজব, অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তির অবসান হবে—বিনিয়োগকারীদের এমন আশ্বাস দিয়েছিল।


কিন্তু লেনদেন শুরুর পর আশ্বাসবাণীর বাস্তব প্রতিফলন বাজারে মোটেই দেখা যায়নি। দরপতন অব্যাহত থাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই শত শত বিনিয়োগকারী মতিঝিলের ডিএসই ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন আধা ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময় বেলা ১১টায় লেনদেন চালু করে।
লেনদেন শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় ১৮০ পয়েন্ট কমে যায়। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক নেমে এসেছে প্রায় চার হাজার ৬৯৬ পয়েন্টে। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বরের পর এটিই সর্বনিম্ন। আর সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল এক দিনে ৪১০ পয়েন্ট বা প্রায় ৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ১৩ হাজার ৫৯১ পয়েন্টে।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ চলাকালে ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও বিক্ষিপ্তভাবে মারধরের ঘটনাও ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারীরা ডিএসইর মূল ভবন ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ভবন অবরুদ্ধ করে রাখেন। যেসব বিনিয়োগকারী ওই সব ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা মারধর করে সরিয়ে দেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের এ বিক্ষোভ চলে। এ সময় শাপলা চত্বর থেকে রামকৃষ্ণ মিশন রোড পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। কয়েক দফা ওই এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অগ্নিনির্বাপণে দমকল বাহিনীর একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিনিয়োগকারীদের ধাওয়ায় সেটি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। অবশ্য তার আগে পুলিশি হস্তক্ষেপে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে। এর মধ্যে সেলিমুল হক নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক প্রলয় কুমার সাহা জানিয়েছেন।
বিলম্বিত লেনদেন ও ডিএসইর ব্যাখ্যা: নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট দেরিতে লেনদেন শুরুর কারণ সম্পর্কে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় লেনদেন শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে। এসইসির সংবাদ সম্মেলনের কারণেই মূলত এই বিলম্ব বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। মঙ্গলবারই ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এসইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গতকাল বুধবার লেনদেন শুরুর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ ব্যাখ্যা দাবি করেন।
বাজার-পরিস্থিতি: ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৪ শতাংশেরই দরপতন ঘটেছে। দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১৬ কোটি টাকায়। বুধবার ঢাকার বাজারে ২৫৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৩৯টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৪ শতাংশেরই দাম কমেছে। এদিন চট্টগ্রামের বাজারে ১৭৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৬৮টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১০টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। বুধবার সিএসইতে ৫২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

No comments

Powered by Blogger.