আবার বড় ধরনের দরপতন

রকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শেয়ার ব্যবসা করতে পারবেন কি পারবেন না, সে বিষয়ে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি_ গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় ডিএসইর লেনদেন আধা ঘণ্টা পিছিয়ে এ মর্মে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েও বিনিয়োগকারীদের শান্ত করতে পারেননি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। উল্টো তার এ বক্তব্যে নতুন করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সরকার ও এসইসির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমেছে।


বিনিয়োগকারীদের তীব্র বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দেশের উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেনও হয়। এ অবস্থায় লেনদেন হওয়া প্রায় সব শেয়ারের দর ও প্রধান মূল্যসূচকের ব্যাপক পতন হয়েছে। ডিএসইর সাধারণ সূচক সাড়ে তিন শতাংশ কমে তিন মাসের সর্বনিম্নে ৪৬৯৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এদিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সরকারের নির্লিপ্ততায় এবং বাধা সত্ত্বেও লেনদেন চালু করায় আবারও ফুঁসে উঠেছেন দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। অস্বাভাবিক দরপতনে গত বছরের একই সময়ে মতিঝিলজুড়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এক বছর পর গতকালও ঠিক সেরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শেয়ারবাজার বিষয়ে সরকার সম্প্রতি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাতিল না করা পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ রাখার সংকল্প নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিনিয়োগকারীরা। চট্টগ্রাম, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ব্রোকারেজগুলোর অবস্থান ডিএসই, ডিএসই এনেক্স ও মধুমিতা ভবনের প্রধান ফটকগুলোয় তালা ঝুলিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তারা লেনদেনে অংশ নিতে ইচ্ছুক কোনো বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিএসই সদস্যদের ওই সব ভবনে ঢুুকতে দেননি। এসইসির নির্দেশে আধা ঘণ্টা দেরিতে সকাল সাড়ে ১১টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হলে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা ১১টা ৩৯ মিনিটে ডিএসই সার্ভার লাইনে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে বিএলআই সিকিউরিটিজ নামে অন্তত একটি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প সার্ভার লাইন থাকায় অন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটেনি।
সকালেই বিনিয়োগকারীরা ডিএসই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত ব্যস্ত রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা ওই রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেননি। এমনকি ওই পথে মোটরসাইকেল আরোহীরা উত্তেজিত বিনিয়োগকারীদের হাতে অপদস্ত হয়েছেন।
বিক্ষোভরত কিছু বিনিয়োগকারী বারবার ডিএসই সার্ভার লাইনে এবং রাস্তায় দাহ্য বস্তু জড়ো করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে কয়েক দফায় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এমনকি দুপুর দেড়টায় সেলিমুল হক ও গাজিউর রহমান নামে দুই বিনিয়োগকারীকে শাপলা চত্বরের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের সহনশীল আচরণে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করে ডিএসই এলাকা ত্যাগ করেন।
ডিএসইতে লেনদেনে আধা ঘণ্টা বিলম্ব :নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যানের নির্দেশে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আধা ঘণ্টা কম লেনদেন হয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) স্বাভাবিক সময়েই লেনদেন শুরু ও শেষ হয়।
উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসই ও সিএসই লেনদেন সার্ভার চালু করা হয়। ডিএসইর শীর্ষ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সকাল পৌনে ১১টায় লেনদেন চালুর ঘোষণা দিলেও লেনদেন শুরুর মাত্র ২ মিনিট আগে এসইসির পক্ষ থেকে লেনদেন আধা ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর ডিএসই তার সার্ভার নিউজে প্রচার করে, দিনের লেনদেন সাড়ে ১১টায় শুরু হবে। এ সময়ে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো বিভ্রান্তিতে পড়ে। এ বিষয়ে এসইসি সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলনের কারণে লেনদেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। যাতে বিনিয়োগকারীরা এসইসির বক্তব্য জেনে লেনদেনে অংশ নেন।
এদিকে, ডিএসইকে লেনদেন বিলম্বে শুরুর আদেশ দেওয়া হলেও সিএসই কর্তৃপক্ষকে লেনদেনে বিলম্বের আদেশ দেওয়া হয়নি। সিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজিদ হোসেন সমকালকে বলেন, 'আমরা সকাল ১০টায়ও এসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তিনি ১১টায় লেনদেন শুরু করতে বলেন। আমরা সে অনুযায়ী ১১টায় লেনদেন চালু করি। লেনদেন চালুর কয়েক মিনিট পর জানতে পারি ডিএসইর লেনদেন বন্ধ।'
সংবাদ সম্মেলনের নামে এসইসির নাটক : মঙ্গলবার কোনোরূপ সাড়া না দিলেও গতকাল সকাল ১১টায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই এসইসির চেয়ারম্যান সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার একান্ত সচিবের মাধ্যমে গুটিকয় সাংবাদিককে ওই সংবাদ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। এ খবর ফাঁস হলে অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকই উপস্থিত হন এবং সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই চেয়ারম্যানের এ আচরণের প্রতিবাদ করেন।
উপস্থিত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা চাইলে তিনি বলেন, 'রাতে সংবাদ সম্মেলন হবে কি হবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।' চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি বলেন, 'সংবাদ সম্মেলনটি ডিএসই, না সিএসই করবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। তাই সবাইকে জানানো হয়নি।' এ পর্যায়ে এসইসির সদস্য হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, 'সংবাদ সম্মেলন শেষে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।' লিখিত বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র কমিশনের অন্য সদস্যদের নিয়ে চেয়ারম্যান সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।
এর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবেন না_ এ মর্মে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন এসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, সেদিন কেবিনেট সভায় পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এর আগে এসইসি কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আয়কর আইনের সংশোধন আনা হয়েছে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা মিডিয়ায় প্রচারিত কোন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

No comments

Powered by Blogger.