ওয়েবে হরতাল by একরামুল হক শামীম

ন্টারনেটের মতো গতিশীল মাধ্যমে হরতাল! অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, এও কি সম্ভব! হরতালের মতো বিষয় কি তাহলে শেষ পর্যন্ত ওয়েব জগতেও ছড়িয়ে পড়ল! আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে উইকিপিডিয়া, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু, এওএল, ইবে, লিংকডইন, মজিলা, টুইটার ও জিঙ্গার মতো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো।
কেন এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো দুটি বিশেষ আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে বলছে? ওয়েবসাইটগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পাস হতে যাওয়া আইন দুটি ইন্টারনেট দুনিয়ার সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেবে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে আইন দুটি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত দুটি আইনের নাম 'স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট (সোপা) এবং প্রটেক্ট ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাক্ট (পিপা)। এই সোপা আর পিপা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নামের মধ্যে ইতিবাচক বিষয়বস্তু থাকলেও এই আইন দুটির প্রয়োগ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে বলে মত দিয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সোপা বিল আকারে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভসে উত্থাপন করা হয়। তখন দাবি করা হয়, অনলাইন দুনিয়ায় কপিরাইটের সুবিধা ভোগ করার জন্য এই আইন কাজ করবে। মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করে অনলাইনে কেউ কোনো কর্মকাণ্ড করলে তার বিরুদ্ধে এই আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। মূলত হলিউডের সিনেমা নির্মাতা, গান বাজারজাতকারক ও গেমস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সোপা বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলছেন। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, এই সোপা ও পিপা বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের অকালমৃত্যু ঘটবে। ব্যবহারকারী তার লেখায় ইচ্ছামতো লিংক ব্যবহার করতে পারবেন না, প্রিয় কোনো গানের ভিডিও চাইলেই শেয়ার করতে পারবেন না। এমনকি অনুমতি ছাড়া কোনো বিষয়বস্তু ইন্টারনেটে তুলে ধরতে পারবেন না। অনলাইন ইউজারের কোনো কর্মকাণ্ড যদি কপিরাইটকে লঙ্ঘন করে, তাহলে কপিরাইটের মালিক সেই ইউজারকে বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে। এমনকি ইউজারের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হবে 'ইউজার কনটেন্ট'ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোকে। ফেসবুক, গুগল প্লাস, টুইটারের মতো জনপ্রিয় সাইটগুলো ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। সোপা বাস্তবায়িত হলে হুমকির মুখে পড়বে জনপ্রিয় এই সাইটগুলোর ভবিষ্যৎ। এ জন্যই অনেকে বলছেন, সোপা ও পিপার বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটবে।
আশার কথা হলো, এরই মধ্যে প্রায় হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান সোপা ও পিপার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। ইংরেজি উইকিপিডিয়া ১৮ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ব্ল্যাকআউট পালন করেছে। এ সময় উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতা কালো করে রাখা হয়। তাতে বড় অক্ষরে লেখা ছিল_ 'ইমাজিন অ্যা ওয়ার্ল্ড উইদাউট অ্যা ফ্রি নলেজ।' এতে আরও বলা হয়, সোপা ও পিপা বাস্তবায়িত হলে মুক্ত ইন্টারনেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উইকিপিডিয়ার পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ও মজিলা এই ব্ল্যাকআউট কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। ইংরেজি উইকিপিডিয়ার মতো বাংলা উইকিপিডিয়া ব্ল্যাকআউটে অংশ না নিলেও কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কালো ব্যাজ দিয়েছে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাস হওয়া আইন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে কীভাবে? এই আইনগুলো নিরাপদ ও মুক্ত ইন্টারনেটের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। তাছাড়া আইনে আমেরিকান ওয়েবসাইট বলতে এমন সব সাইটকে বোঝানো হবে, যাদের ডোমেইন নাম আমেরিকান যেমন ডট কম, ডট অর্গ, ডট নেট, ডট ইউএস। ফলে ডট কম ডোমেইনযুক্ত যে কোনো ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। সোপা ও পিপা পুরো ইন্টারনেট দুনিয়ার জন্য সেন্সরশিপের হুমকি ডেকে আনবে।

No comments

Powered by Blogger.