বেপরোয়া শিকারি-সুন্দরবন বাঁচান

শিকারির ফাঁদে পড়েছে সুন্দরবন। হরিণ শিকারিরা এখন বেপরোয়া। বাঘও ধরা পড়ছে তাদের ফাঁদে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদীরা যখন আন্দোলন করছে বন্য প্রাণী বাঁচানোর জন্য, বন রক্ষা করার জন্য, তখনো আমাদের সংবাদ পড়তে হয় 'সুন্দরবন কাঁপাচ্ছে হরিণ শিকারিরা'। কিংবা 'পঙ্গু বাঘটি সাফারি পার্কে'। এই দুটি শিরোনাম একই দিনের কালের কণ্ঠের দুটি সংবাদের। এতেই বোঝা যায় সুন্দরবন এখন কেমন হুমকির মুখে।


এই হুমকি বাংলাদেশের বন্য প্রাণীর জন্য যেমন সত্য, তেমনি সত্য আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য। এই হুমকি মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তা কি যথেষ্ট? অন্তত দুটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, মোটেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বনকে রক্ষা করার জন্য। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, সেই সঙ্গে বন রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের শক্তি নিয়েও কথা উঠতে পারে। তাদের কি আধুনিক ব্যবস্থাসজ্জিত করা হচ্ছে? কিংবা তাদের দুর্নীতিমুক্ত করারও কোনো উদ্যোগ কি গ্রহণ করা হয়েছে?
পৃথিবী থেকে বিপন্ন হতে থাকা বাঘ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কারণ একক কোনো বনে সর্বাধিক রয়েল বেঙ্গল বাঘ আমাদের সুন্দরবনেই। সেই গর্বকে খর্ব করার প্রচেষ্টা প্রতিহত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সে কাজে অবহেলা সুস্পষ্ট। যে কারণে সম্প্রতি একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকারির ফাঁদে পড়ে নিজের একটি পা হারিয়েছে। পা হারিয়ে সে নিজের খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে নেমে এসেছে লোকালয়ে। কিন্তু ওখানে এসেও বাঁচতে পারেনি বাঘটি। গ্রামবাসীর পাতা ফাঁদে ধরা পড়েছে আবার। ভাগ্য ভালো, গ্রামের মানুষ বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করেনি। যে কারণে তাকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে মাত্র ১৫ দিনে দুই হাজার ২০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করতে পেরেছে বন বিভাগ। এতেই বোঝা যায় সুন্দরবন কোন অবস্থায় আছে। আর সেখানকার বন্য প্রাণীর অবস্থাও বা কেমন ঝুঁকির মধ্যে। কটকা, জামতলা ও বাদামতলা এলাকা থেকে আরো ফাঁদ উদ্ধার করার পর সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আর খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না। হরিণ বিপন্ন হোক_এটা আমরা চাইতে পারি না। বাঘ বিপন্ন হোক_এটাও চাই না। এটা আমাদের পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনেই জরুরি। আর সেই জরুরি কাজটি করতে হলে আধুনিক বন ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন আছে। বন রক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রচারব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.