এ লজ্জা গোটা জাতির

পরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই পুলিশের নানা ধরনের অপকর্ম নিয়ে অতীতে অনেক লেখালেখি হয়েছে। রক্ষক হয়ে ভক্ষক সাজার অভিযোগও উঠেছে অনেকবার। কিন্তু এত জঘন্য অপরাধের সরাসরি অভিযোগ বোধহয় খুব কমই উঠেছে। আদালত ভবন, যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করা হয়, সে ভবনেই পুলিশ মাদকদ্রব্য বিক্রির রীতিমতো দোকান খুলে বসেছে_এমনটা কল্পনা করতেও লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।


বিভিন্ন সময় পুলিশি অভিযানে যেসব মাদক ধরা পড়ে, সেগুলোর কিছু আলামত হিসেবে জমা হয় আদালতের মালখানায়। বিচারকাজে প্রমাণ হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হয়। আর মালখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা কৌশলে সেগুলো নেশাখোর, এমনকি কারাবন্দিদের কাছেও বিক্রি করে দিচ্ছে। নেশাকারীরা মালখানায় বসেই নেশা করছে। তারপর খালি বোতলে পানি ভরে সেগুলো প্রমাণ হিসেবে মালখানায় সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কী হতে পারে? এরা বিচারপ্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করছে। বৃহস্পতিবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনটিতে ১০ বছর ধরে চলে আসা এই জঘন্য অপরাধের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে পুলিশের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের একটি চক্র জড়িত। আমরা জানি না, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টিকে কিভাবে দেখবেন কিংবা বিষয়টি তাঁদের জন্য কতটুকু লজ্জাকর! তবে এতে যে গোটা জাতি চরম লজ্জাবোধ করছে_সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই যদি হয় আমাদের পুলিশ বিভাগের অবস্থা, তাহলে দেশে অপরাধ দমনের চিত্রটা কেমন হবে, সেটাও আমরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি।
আমরা বলছি না, গোটা পুলিশ বিভাগই পচে গেছে। বলার কোনো কারণও নেই। এই পুলিশ বিভাগের সদস্যরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করে, আলামতসহ আদালতে চালান দেন। কিন্তু সেই আলামত যদি এভাবে গায়েব হয়ে যায়, তাহলে বিচারক তাঁদের বিচার করবেন কিভাবে? অপরাধীরা শাস্তি পাবে কিভাবে? তবে এটাও সত্য, পুলিশ বিভাগে এখন এমন অপরাধী-মানসিকতার বহু লোকই রয়েছে। একশ্রেণীর অসৎ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া, নিরীহ লোকজনকে হয়রানি, মামলার আলামত গায়েব, তদন্ত প্রতিবেদন বিকৃত এমনকি খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধ করার বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও বিভিন্ন সময় আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এর কিছু কিছু অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এর আগে আমরা দিনাজপুরের ইয়াসমিন নামে এক যুবতীকে পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার কথা জেনেছিলাম। কয়েক দিন আগেও গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে এক শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আমরা বুঝতে পারি না, এসব কী করে সম্ভব হয়। পুলিশ বাহিনীর ভেতরে কি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা তৎপরতা বলতে কিছুই নেই? পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আদালতের মতো একটি জায়গায় পুলিশেরই কিছু লোক ১০ বছর ধরে এমন একটি জঘন্য অপরাধ করে আসছিল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও পুলিশ বিভাগ কেন নিজেরা সেটি উদ্ঘাটন করতে পারল না? তারা যদি নিজেদের ভেতরের এত বড় একটি অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জানতে না পারে, তাহলে তারা সারা দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে?
কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অপরাধের এ অভিযোগ শুধু পুলিশ বাহিনীর নয়, গোটা জাতির কপালেই কলঙ্কতিলক এঁকে দিয়েছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। পাশাপাশি কোনো নিরপেক্ষ বাহিনীকে দিয়ে সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে গোপন অভিযান পরিচালনা করার দাবিও জানাচ্ছি। যে পুলিশ বাহিনী দেশের মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে, সেই পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই অপরাধী মুক্ত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.