নরসিংদী পৌর উপনির্বাচন-শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জন-আস্থার জয় হোক

রসিংদী পৌরসভা উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ সকাল থেকে। এর আগে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনেও ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। এর আগে ওই দুই সিটি করপোরেশনে ইভিএমে সফল ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন। নরসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হলে সেখানকার মেয়র পদটি শূন্য হয়।


নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী হলেও লড়াই হবে প্রধানত আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে। দুজনই লোকমান হত্যাকাণ্ডের বাদী-বিবাদী। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নিহত লোকমান হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুলকে প্রার্থী ঘোষণা দেয়। দলের সমর্থন ছাড়াই লোকমান হত্যা মামলার চার নম্বর আসামি ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভুঁইয়া প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জামিনে রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী মোছাবি্বর আহমেদ তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যেই হবে মূল লড়াই। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, নরসিংদী পৌরসভার ভোটারদের আগ্রহও এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে। অন্য প্রার্থীরা সেভাবে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারেননি বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১ নভেম্বর রাতে মেয়র লোকমান হোসেনকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পৌরসভা মেয়রের আসন শূন্য হলে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। পৌর এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। তবে সেবামূলক সংস্থা (অ্যাম্বুলেন্স), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য তা শিথিলযোগ্য।
নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর। স্বস্তির বিষয়, গতকাল পর্যন্ত সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সহিংসতা হয়নি। আশা করা যেতে পারে, নির্বাচনের দিনও সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে বলে আশা করা যায়। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। সর্বমহলে প্রশংসিত হয় দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ দুটি নির্বাচন উদাহরণ হয়ে থাকবে। কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মতো। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, সেটা প্রমাণ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশই এই দুই নির্বাচনে ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনেও নির্বাচন কমিশন আগের দুই নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আশা করা যায়।
নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনে বর্তমানে প্রার্থী পাঁচজন। এই পাঁচজনের ভেতর থেকে যেকোনো একজনই নির্বাচিত হবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হলেও তিনিই হবেন পৌরসভার সব মানুষের মেয়র। সবার হয়েই কাজ করতে হবে তাঁকে। তার আগে নির্বাচনে জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটবে। দেখা যাক, নরসিংদীর জনগণ কার প্রতি আস্থা জানায়। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে_এটাই আশা করি আমরা। নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনে জন-আস্থার জয় হোক। জয় হোক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার।

No comments

Powered by Blogger.