স্বর্গ থেকে পতন!

ক বছরও হয়নি, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে বলা হচ্ছিল ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। বিশ্বকাপ জয়ের দুই দিন পর শচীন টেন্ডুলকার বলেছিলেন, ‘যাদের নেতৃত্বে খেলেছি, তাদের মধ্যে ধোনিই সেরা।’ ‘সর্বকালের সেরা’র আরেক দাবিদার সৌরভ গাঙ্গুলী তো এগিয়ে গিয়েছিলেন আরও এক ধাপ, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ধোনিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক।’ সৌরভের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এমন লোক তখন খুব কমই ছিল।


টেন্ডুলকারের এখন কী ভাবনা, জানা যায়নি। তবে পার্থ টেস্ট শেষে সৌরভ বললেন, ‘টেস্টে অন্তত ধোনির বিকল্প ভাবার সময় এসে গেছে।’ সৌরভের এই বক্তব্যকেও সমর্থন করার লোক কম নেই! স্বপ্নপূরণের নায়ক সাড়ে নয় মাসের মাথায়ই প্রায় খলনায়ক!
অথচ তাঁর শুরুটা এমন হয়েছিল, বলিউডের চিত্রনাট্যকারও হয়তো এতটা ভাবার দুঃসাহস দেখাবেন না। ২০০৭ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতালেন ভারতকে। ওয়ানডেতেও সাফল্য, পরের বছর নেতৃত্ব পেলেন টেস্ট দলেরও। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ১১ টেস্টেই ছিলেন অপরাজিত, এর মধ্যে জয় আটটিতেই। কথা বলছিল নিজের ব্যাটও। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ভারত প্রথমবারের মতো টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠল তাঁর নেতৃত্বেই। ২৮ বছরের খরা ঘুচিয়ে দলকে দেশের মাটিতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এনে দিলেন গত বছর।
বড় এসব সাফল্য তো ছিলই, ধোনির পরশেই যেন সোনা হয়ে যাচ্ছিল সব। আচমকাই হয়তো স্পিন দিয়ে শুরু করলেন, সেখানেও সাফল্য। হঠাৎই অপ্রত্যাশিত কারও একজনের হাতে বল তুলে দিলেন, কাজে লেগে গেল ফাটকাটা। একবার-দুবার হলে কথা ছিল, বারবার। ধোনির নামে চারদিকে ধন্য ধন্য রব!
সেই ধোনিরই এখন মুন্ডুপাত চলছে সমানে। রক্ষণাত্মক, মোটেও দূরদর্শী নন, দলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছেন না—এমন হাজারো খুঁত পাওয়া যাচ্ছে অধিনায়কত্বে। প্রথম ১১ টেস্টে হারের মুখ দেখেননি যে অধিনায়ক, সর্বশেষ ২৬ টেস্টের ১০টিতেই হেরেছেন। দেশের বাইরে হেরেছেন টানা সাত টেস্ট, এর চারটিই ইনিংস ব্যবধানে, বাকি তিনটিও বড় ব্যবধানে। দলের এমন দুঃসময়ে যোগ হয়েছে নিজের ব্যাটে রান-খরা। ইংল্যান্ডে ধবলধোলাইয়ের সিরিজে ২২০ রান করেছিলেন ৩১.৪০ গড়ে, চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ২০.৪০ গড়ে ১০২ রান।
সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল তো টেস্ট ক্রিকেটার ধোনির শেষ-ই দেখে ফেলেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন একজন অধিনায়ক খুঁজে বের করতে হবে। ধোনির জন্য টেস্ট ক্রিকেট আর নয়। বিদেশে দলের জন্য ভয়াবহ দুটো সিরিজে দলকে ও খুব বাজেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। গ্লাভস হাতে তো বটেই, ব্যাট হাতেও ওর এই ফর্মে দলে জায়গা পাওয়া উচিত নয়।’ সুনীল গাভাস্কার অবশ্য এখনো অধিনায়ক ধোনির বিকল্প দেখছেন না, ‘দল ওর ব্যাটিং মিস করবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক রেকর্ড ভালো না হলেও অ্যাডিলেডে দল ওর নেতৃত্ব মিস করবে। এই মুহূর্তে ধোনির কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভালো কেউ আছে বলে মনে হয় না।’
যতটা দ্রুত উত্থান, পতন হচ্ছে যেন আরও দ্রুতগতিতে। অ্যাডিলেডে নিষিদ্ধ হওয়ার অন্তত একটা ইতিবাচক দিক আছে—ভাবার অবকাশ পাবেন ধোনি। ভেবে সমাধানও বের করতে হবে দ্রুত, সময় যে ফুরিয়ে আসছে! ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.