দেশেই স্যাটেল করার স্বপ্ন দেখছেন তামান্না

ঢালিউডের সুইডেন প্রবাসী আজকের নায়িকা তামান্না পেশায় একজন চিকিৎসক। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা শৈশব থেকেই। মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়ার । মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে পাড়ি দেন সুইডেন। সেখানেই পড়াশোনা আর বড় হয়ে উঠা।

পড়াশোনা শেষ করে ডেন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার চেয়ে চলচ্চিত্রের প্রতিই তার ছিল বেশি ঝোঁক। সেই ঝোঁক থেকেই ঢাকা বেড়াতে এসে যুক্ত হন ঢালিউডে। এটা সেই ২০০১ সালের কথা। এরপর বেশ কয়েকবার ‘বাংলাদেশ টু সুইডেন’ করার ফাঁকে ফাঁকেই ঢালিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন তামান্না।

খুব ছোটবেলা থেকে তামান্নার সঙ্গীত ও নৃত্যচর্চা শুরু করেন। ক্ল্যাসিক ও নজরুল সঙ্গীতে তালিম নেন। শিখেন ক্ল্যাসিকাল ও মর্ডান নাচ। আর মায়ের হাত ধরে সিনেমা দেখাও শুরু সেই ছোটবেলায়। এ প্রসঙ্গে তামান্না বলেন, আমাদের পরিবার খুবই সংস্কৃতিমনা। ছোটবেলা থেকেই তাই গান আর নাচ শেখার জন্য আমার বাবা-মা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। কথা বলতে শেখার পরপরই আমাকে গান আর নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো। আমার মা ছিলেন সিনেমার পোকা। তার হাত ধরে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার স্মৃতি এখনো আমার আবছা আবছা মনে পড়ে। সিনেমার প্রতি আমার ভালোবাসা বোধহয় সেখান থেকেই পাওয়া। মনের মধ্যে চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার বীজ বোধহয় তখনই ঢুকে যায়। পাঁচ বছর বয়সে সপরিবারে আমরা সুইডেন চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর নাচ আর গান চর্চাটা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। তবে বিশ্বের সেরা সব চলচ্চিত্র দেখা সুযোগ পাই সুইডেনে।

তামান্না ছুটিতে ঢাকায় আসেন বেড়াতে আসেন ২০০০ সালের শুরুতে । একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে স্বনামধন্য নির্মাতা আফজাল হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয়। মিডিয়ায় কাজ করার প্রতি তামান্নার আগ্রহের কথা জেনে তিনি একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে তামান্নাকে কাজ করার সুযোগ করে দেন। মিডিয়ায় তামান্নার অভিষেক হয় আফজাল হোসেন নির্মিত স্টারশিপের একটি বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে। একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেই বেশ পরিচিতি পেয়ে যান তিনি। স্বপ্নের ভুবন চলচ্চিত্রে কাজ করার দরোজা খুলে যায় তার সামনে।

চলচ্চিত্রে তামান্নার অভিষেক হয়েছিল সাইফুল আযম কাশেমের ‘ত্যাজ্যপুত্র’ ছবিতে বাপ্পারাজের বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এতে কাজ করার মাঝেই শহীদুল আলম খোকন পরিচলিত ‘ভন্ড’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে। সে সময় ঢালিউডে নায়ক হিসেবে রুবেল ছিলেন সুপারহিট। ছবিটিতে রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করেন তামান্না। ‘ভন্ড’ ছবিটিই তামান্না অভিনীত প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি। ছবিটির বানিজ্যিক সাফল্যে তামান্নার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন অনেক নির্মাতা। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব আসতে থাকে তার কাছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘হৃদয়ে লেখা নাম’, ‘তুমি আমার ভালোবাসা’, ‘কঠিন শাস্তি’, ‘আমার প্রতিজ্ঞা’, ‘চাই শুধু ভালোবাসা’, ‘অশান্তির আগুন’, ‘সন্ত্রাসী বন্ধু’ প্রভৃতি। তামান্না অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই বানিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখে।

ঢালিউডে নায়িকা হিসেবে তামান্নার চাহিদা যখন তুঙ্গে, সেই সময়টাতেই তিনি আবার সুইডেন পাড়ি দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তামান্না বলেন, পড়াশোনা শেষ করার জন্যই আমাকে সে সময় সুইডেনে চলে যেতে হয়েছিল। সুইডেনের হুদিংগে ডেন্টাল কলেজ থেকে ডেন্টাল সার্জারিতে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ঢাকায় বেড়াতে এসে আমি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। পড়াশোনায় একটা লম্বা গ্যাপ পড়ে যায়। যা আমার বাবা-মার পছন্দ ছিল না। তারা সবসময় বলতেন, পড়াশোনা শেষ করে তুমি ফিল্মে কাজ করতে চাইলে আমরা নিষেধ করবো না। তাই ২০০২ সালে আমাকে আবার সুইডেন চলে যেতে হয় মাস্টার্স আর পোস্ট-মাস্টার্স করার জন্য। এই দুটি কোর্স শেষ করে এখন আমি ‘স্টেফানগ্রাফ প্রাকটিশনার্স‘ নামে একটি ডেন্টিস্ট গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছি।

২০০২ সালে সুইডেন ফিরে যাবার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিলো না তামান্নার। গতবছরের শুরুতে ঢাকায় বেড়াতে এসে তামান্না আবারও জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। ঢালিউডে তামান্নার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয় মঈন বিশ্বাস পরিচালিত ‘প্রেমের জন্য পৃথিবী’ ছবিতে কাজ করার মাধ্যমে। এ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার মাঝেই তাকে একটি ডিপ্লোমা কোর্সে অংশ নেওয়ার জন্য চলে যেতে হয় সুইডেন। ডিসেম্বরে তামান্না দেশে ফিরে আসেন এ ছবির শুটিংয়ের কাজ শেষ করার জন্য।

লম্বা বিরতির পর চলচ্চিত্রে অভিনয়ে  প্রসঙ্গে তামান্না বললেন, অনেককিছুই এখন নতুন লাগে। মনে হচ্ছে আমি একেবারেই নতুন কেউ। তবে সবাই অনেক সহযোগিতা করছেন। অনেকেই তাদের পরবর্তী ছবিতে কাজ করার জন্যও বলছেন। এটা সত্যিই আমাকে নতুনভাবে আনন্দ দিচ্ছে। দর্শক, পরিচালক প্রযোজকসহ সবাই যে আমাকে মনে রেখেছেন, সেজন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

‘প্রেমের জন্য পৃথিবী’ সিনেমার কাজ শেষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহে আবার  সুইডেন চলে যাবেন বলে জানান তামান্না। তিনি আরো জানান, এরপর আরো সিনেমায় কাজ করবেন কিনা সেটা নির্ভর করবে এই ছবিটির সাফল্য এবং দর্শক প্রিয়তার উপর। এ প্রসঙ্গে তামান্নার বলেন, যদি দর্শক আমাকে নিয়মিত চলচ্চিত্রে দেখতে চান, তাহলে আমি আবারো ফিরে আসবো ঢালিউডের রূপালী জগতে।

ঢালিউডের ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে তামান্না আশাবাদী । এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগে যখন এখানে সিনেমায় কাজ করেছি, তখন অশ্লীলতার মাত্রা অনেক বেশি ছিলো। কর্তৃপক্ষের যেনো কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিলো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। আমাদের দেশে এখন অনেক মানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই সেগুলোর শিল্পমান অনেক ভালো। এমন সিনেমায় কাজের সুযোগ পেলে এবং দর্শক আমাকে আবারো আগের মতো চাইলে সিনেমার কাজ অবশ্যই চালিয়ে যাবো। বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে নিয়মিত ছবিতে অভিনয় করবো।

No comments

Powered by Blogger.