পবিত্র কোরআনের আলো-কওমের সরদাররা নবী শোয়ায়েব ও তাঁর সঙ্গীদের তাড়িয়ে দেওয়ার সংকল্প করেছিল

৮৬. ওয়ালা- তাক্বউ'দূ বিকুলি্ল সিরাতি্বন তূয়ি'দূনা ওয়া তাসুদ্দূনা আ'ন ছাবীলিল্লাহি মান আ-মানা বিহী ওয়া তাবগূনাহা ই'ওয়া-জা-; ওয়ায্কুরূ ইয্ কুনতুম ক্বালীলান ফাকাছ্ছারাকুম; ওয়ানযুরূ কাইফা কা-না আ'কি্ববাতুল মুফছিদীন।


৮৭. ওয়া ইন কা-না ত্বায়িফাতুম্ মিনকুম আমানূ বিল্লাযী উরছিলতু বিহী ওয়া ত্বাইফাতুল্লাম ইউমিনূ ফাসবিরূ হাত্তা- ইয়াহ্কুমাল্লাহু বাইনানা-; ওয়া হুওয়া খাইরুল হাকিমীন।
৮৮. ক্বা-লাল মালা-উল্লাযীনা ছ্তাকবারূ মিন ক্বাওমিহী লানুখরিজান্নাকা ইয়া-শুআ'ইবু ওয়াল্লাযীনা আমানূ মাআ'কা মিন্ ক্বারইয়াতিনা- আও লাতাঊ'দুন্না ফী মিল্লাতিনা- ক্বালা আওয়ালাও কুন্না কাফিরীন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৮৬-৮৮]

অনুবাদ : ৮৬. তোমরা রাস্তার ধারে এই উদ্দেশ্যে বসে থেকো না যে তোমরা পথিকদের জানমাল লুট করে তাদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করবে। তাদের আল্লাহর পথে চলতে বাধা দান করবে এবং সব কিছুতে বক্রতা বা বিরূপ অর্থ অনুসন্ধান করবে। সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের জনবল ও সম্পদ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। আর এটাও লক্ষ করো যে উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কী হয়েছে।
৮৭. (শোয়ায়েব বললেন) আমার মাধ্যমে তোমাদের কাছে যে বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে, এর ওপর যদি তোমাদের একদল ইমান আনে এবং অন্য দল ইমান না আনে, তবে একটু অপেক্ষা করো। আল্লাহ যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন, আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।
৮৮. তাঁর (শোয়ায়েবের) সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতারা বলল, হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সঙ্গে যারা ইমান এনেছে, তাদের সবাইকে আমাদের এই জনপদ থেকে বের করে দেব। অন্যথায় তোমাদের সবাইকে আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে। শোয়ায়েব বললেন, যদি আমরা সেটা ঘৃণা করি তবু কি?

ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় নবী শোয়ায়েব (আ.) ও তাঁর কওমের লোকদের মধ্যকার সংগ্রামের কাহিনী আলোচিত হয়েছে। কথিত আছে, নবী হজরত শোয়ায়েব (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকরা যারা ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত, তারা তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য পথ মিসর ও এশিয়া মাইনর এবং মধ্যবর্তী পথে বাণিজ্যযাত্রীদের ত্রাসে পরিণত হয়েছিল। তারা বাণিজ্যযাত্রীদের ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যেত এবং তাদের হত্যাও করত। ৮৬ নম্বর আয়াতে এদের প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে। নবী শোয়ায়েবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এদের জন্য উপদেশ পাঠিয়েছিলেন। এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে একসময়ে তাদের সম্প্রদায়ে, এমনকি গোটা মানবজাতিতেই জনসংখ্যা ছিল খুব কম। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাদের গোত্রের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং বিত্ত-বৈভবেও সমৃদ্ধি দিয়েছেন। সুতরাং তাদের উচিত ন্যায়নিষ্ঠার পথ অনুসরণ করে মানব সমাজের শান্তি ও সংহতি রক্ষা করা। ৮৭ নম্বর আয়াতে নবী শোয়ায়েবের সম্প্রদায়ের সরদারদের একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সত্য ধর্ম ও ভ্রান্ত ধর্মের মধ্যকার ফারাক নিরূপণের বিষয় আলোচিত হয়েছে। তারা বলত, আমরা তো মুমিন ও কাফেরদের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। যারা ইমান আনেনি, তারাও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে জীবনযাপন করছে। তাদের পথ যদি আল্লাহর পছন্দ না হতো, তবে তাদের তিনি এমন সুখের জীবন দেবেন কেন? এরই উত্তর দেওয়া হয়েছে এভাবে যে বর্তমানের ক্ষণস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি দেখে এই ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। মানুষের জীবনের পরম পরিণতির ব্যাপারে আল্লাহর ফয়সালা কী হয় সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ মানুষের জীবনে ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী, তাদের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি সাফল্যের। আর যারা অসত্য ও অন্যায়ের অনুসারী, তাদের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি ব্যর্থতার। ৮৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে শোয়ায়েব (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সরদারদের ছুড়ে দেওয়া আলটিমেটামের কথা। তারা তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরবর্তী আয়াতে তাদের করুণ পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.