মুড়ি খাওয়াই অপরাধ!

চুরি করে মুড়ি খাওয়ার অপরাধে প্রাণ দিতে হলো শিশু গৃহকর্মী হালিমাকে (১২)। অভিযোগ পাওয়া গেছে, গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুর পর গৃহকর্তা হালিমার লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এলাকার নৈশ প্রহরীদের তৎপরতায় ব্যর্থ হয় সে অপচেষ্টা। গতকাল রবিবার রাজধানীর পল্লবী এলাকায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।


এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গৃহকর্তা খন্দকার ইমরান ও তাঁর স্ত্রী শিউলী বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পল্লবী থানার ওসি আবদুল লতিফ শেখ জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পল্লবী এ-ব্লকের ২/২ রোডের ১৫৩/৩ নম্বর বাড়ির চার তলা থেকে গৃহকর্মী হালিমার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সাক্ষীদের বক্তব্য ও আলামত দেখে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ হয়। তাই গৃহকর্তা খন্দকার ইমরান ও গৃহকর্ত্রী শিউলী বেগমকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার বাদী পল্লবী থানার এসআই আনিসুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল সেহরির পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গৃহকর্তা খন্দকার ইমরান একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে হালিমার লাশটি দূরে কোথাও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মহল্লায় দায়িত্বরত নৈশ প্রহরীদের বাধার মুখে তিনি বাসায় ফিরে যান। ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় নৈশ প্রহরীরা থানায় খবর দেন। পরে ছয় তলা বাড়ির চার তলায় খন্দকার ইমরানের বাসার মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় হালিমার লাশ পাওয়া যায়। হালিমার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য দেন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী। হালিমার মুখ, বুক, পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। লাশটি থেকে সামান্য গন্ধও বের হচ্ছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, শনিবার দিনে বা সন্ধ্যায় হালিমার মৃত্যু হয়। আনিসুর রহমান আরো বলেন, ইমরান ও শিউলীর দুই শিশু সন্তান পুলিশকে জানায়, শুক্রবার চুরি করে মুড়ি খাওয়ার কারণে হালিমাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটান শিউলী। বাসা থেকে দুটি বেলুন ও একটি প্লাস্টিকের বস্তা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী নৈশ প্রহরী ইয়াকুব ও বাবু বলেন, গতকাল সেহরি শেষে খন্দকার ইমরান একটি প্লাস্টিকের বস্তা কাঁধে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। রাস্তায় দায়িত্বরত ইয়াকুব ইমরানের কাছে জানতে চান, বস্তায় কী আছে এবং এত ভোরে তিনি কোথায় যাচ্ছেন? এ সময় ইমরান কিছুটা বিব্রত হয়ে জানান, বস্তায় মোটর পার্টস আছে। তিনি গ্যারেজে যাচ্ছেন। তবে বস্তার আকার এবং ইমরানের কথা শুনে সন্দেহ হয় ইয়াকুবের। ওই সময় অন্য নৈশ প্রহরীরাও সেখানে জড়ো হন। তাঁরা ইমরানকে যেতে বাধা দেন এবং বস্তায় কী আছে তা দেখতে চান। ইমরান বস্তা না দেখিয়ে দ্রুত বাসায় ঢুকে পড়েন। এরপর নৈশ প্রহরীরা থানায় খবর দেন।
পুলিশ জানায়, মোটর পার্টসের মালিক খন্দকার ইমরানের বাসায় দেড় বছর ধরে কাজ করত হালিমা। ইমরান ও তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন সময় তার ওপর নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হালিমার বাবা মৃত মোছলেম শিকদার। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দার বানেশ্বরদি গ্রামে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত হালিমার কোনো আত্মীয়স্বজন ঢাকায় পৌঁছায়নি। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.