ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কাণ্ড-নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার কাম্য

দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকদের অসহিষ্ণু আচরণ ও সাংবাদিকদের ওপর উপর্যুপরি হামলায় শুধু যে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছে তা-ই নয়, চিকিৎসা শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। বুধবার সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মেডিক্যাল কলেজ


হাসপাতালের একদল ইন্টার্নি চিকিৎসক একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালালে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক আহত হন। তারা বেশ কয়েকটি বেসরকারি চ্যানেলের টিভি ক্যামেরা এবং সংবাদপত্রের স্থির ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও ভাঙচুর করে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় শাহবাগ থানায় ১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯ জুলাই একটি অমানবিক ও চিকিৎসানীতিবহির্ভূত ঘটনা সাংবাদিকরা পত্রিকায় প্রকাশ করলে ইন্টার্নি ডাক্তাররা ক্ষুব্ধ হয় এবং অন্যায়ভাবে হাসপাতাল চত্বরে বিনা অনুমতিতে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। জানা গেছে, ১৯ জুলাই এক রোগীকে ড্রেসিং করতে গেলে একজন মহিলা ইন্টার্নি ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর বিতর্ক হয়। এর জের ধরে পরদিন একজন অধ্যাপক চিকিৎসক ওয়ার্ডে প্রবেশ করে রোগীকে থাপ্পড় মারেন। এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হলে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা সাংবাদিক দেখলেই মারধর বা ঢুকতে নিষেধ করে। গতকালের ঘটনার আগে আরো তিনবার তারা সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা চালায়। ইন্টার্নি চিকিৎসকদের এ অপরাধের কারণে মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আমরা যুগ যুগ ধরে জেনে এসেছি, মানবসেবাই চিকিৎসকের পরম ধর্ম। এই চিকিৎসকদের মধ্যে এই অসহিষ্ণুতা ও মাস্তানির প্রবণতা দেখা দিলে দেশের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত হতে হয়। সাংবাদিকদের ওপর এই হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থী। এমবিবিএস পাস করা ইন্টার্নি চিকিৎসকদের এমন জঘন্য আচরণ বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। সাংবাদিক নেতারা এ ধরনের কাজের কঠোর সমালোচনা করে যথাযথ বিচার দাবি করেছেন। গণমাধ্যমের ওপর এমন অন্যায়ের যদি ন্যায়সংগত বিচার না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক এ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, যা গোটা জাতির বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও অবাধ পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। গণমাধ্যমের অংশ হিসেবে আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি ও যথাযথ বিচার দাবি করছি। অন্যদিকে সাধারণ রোগীরা বুধবারের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং অনেকে চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। কাজেই সেখানে সেবার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাটা খুবই জরুরি। অনভিপ্রেত এসব ঘটনা নিয়ে যথারীতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের নিয়ে ৫ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। এসব কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে বহুকাল ধরে আমরা দেখে আসছি, তদন্ত কমিটির সুপারিশে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তদন্ত কমিটি একটি আইওয়াশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র। এ ঘটনার যদি সঠিক বিচার করতে হয়, তাহলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে নিরপেক্ষ কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.