বছরে পিডিবির লোকসান ৬৪০০ কোটি টাকা by রেজা রায়হান

পাইকারি ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর পরও ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এটি প্রাথমিক হিসাব। চূড়ান্ত নিরীক্ষণের পর লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
পিডিবির চূড়ান্ত নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী পূর্ববর্তী ২০১০-১১ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এক বছরে লোকসান বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮২৯ কোটি টাকা লোকসান দেয় পিডিবি, যা সহনীয় পর্যায়ে ছিল।
আওয়ামী লীগের আগের সরকারের সময় স্থাপিত আইপিপি (স্বতন্ত্র বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র) থেকে কেনা বিদ্যুতে সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না। বরং পিডিবি এ বিদ্যুৎ বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ২০১০ সালের ৬ এপ্রিলের অনুমোদন অনুযায়ী ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকারী বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এক থেকে দুই বছর এবং তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দেশীয় কম্পানি থেকে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে পিডিবির লোকসান সহনীয় পর্যায়ে থাকত বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আযাদ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লঙ্ঘন করে বেশি মেয়াদে কুইক রেন্টাল কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতি, বাজেট শৃঙ্খলা ও ব্যাংকিং খাতে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এখনো আবুল কালাম আযাদ বিদ্যুৎ বিভাগে বহাল থেকে সরকারকে আরো কয়েকটি অস্বচ্ছ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী বড় চুক্তির ফাঁদে আটকে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
পিডিবির নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে উচ্চ দরে বিদ্যুৎ কিনে কম দরে বিক্রির কারণেই পূর্ববর্তী ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে পিডিবির প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোকসান বেড়েছে। আর নির্মাণ শেষ হওয়ার পর সব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ায় ২০১১-১২ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান আরো এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। তবে বিদ্যুতের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকারকে বিগত ৩০ জুন পর্যন্ত বিগত বাজেটের 'অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা' খাত থেকে পিডিবিকে ছয় হাজার ৭২৯ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা দিতে হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ছয় হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা পেয়েছিল।
২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৭৩৩ মেগাওয়াট। এক হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট আইপিপি ও ৪৪৯ মেগাওয়াট রেন্টালসহ সে সময় মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ৬১১ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ২০১১০-১১ অর্থবছরে সরকারি কেন্দ্রে চার হাজার ১৭২, আইপিপি এক হাজার ৪৫৯ এবং রেন্টাল এক হাজার ৭০৩ মেগাওয়াটসহ মোট উৎপাদনক্ষমতা ছিল সাত হাজার ৩৩৩ মেগাওয়াট। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ছিল সাত হাজার ৫৫১ মেগাওয়াট। সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা আরো বাড়লেও জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যের কারণে লোডশেডিং থেকে মানুষ মুক্তি পায়নি। অথচ বিদ্যুৎ না কিনেও রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কম্পানিগুলোকে সরকার ভাড়া বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। পিডিবির লোকসান বৃদ্ধির এটাই অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।

No comments

Powered by Blogger.