ব্যস্ত রুহীর উড়ে উড়ে চলা by কামরুজ্জামান মিলু

একজন র্যাম্প মডেল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত রুহী। তবে এ মুহূর্তে অভিনয় নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি কলকাতার পরিচালক মহুয়া চক্রবর্তীর সিনেমা ‘গ্ল্যামার’-এ কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তার বিপরীতে অভিনয় করছেন কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক ইন্দ্রনীল।

“র্যাম্প মডেলরা ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে পারেন না, এটা আমি মানতে রাজি নই। হয়তো পরিচালকরা আমাদের নিয়ে কাজ করতে ভয় পান, কারণ আমাদের ধৈর্য কম। তারা যতটা সম্মান ও সময়ানুবর্তিতা পছন্দ করেন তার অনেকটাই হয়তো আমাদের নেই। কিন্তু আমার নাটকে অভিনয় করতে এসে মনে হয়েছে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সত্যিই একটা নিয়ম-কানুন দরকার। নিয়মের বাইরে যে কেউ চললে তাকে নিয়ে সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক”, অভিনয় নিয়ে বলছিলেন রুহী।
বাবা শামসুল করিম পূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ছিলেন। সব সময়ই কড়া শাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন রুহী। কিন্তু ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় এই মেয়ের ছোটবেলা থেকেই মডেলিং ছিল প্রিয় বিষয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য মতো করে পোজ দিতেন। কিন্তু ফটোসেশনের জন্য কখনই বাবার কাছে টাকা চাইতে সাহস হয়নি তার। বড় ভাই শাহিনুল করিম সবসময়ই চাইতেন তার আদরের বোনটি একদিন হবে দেশের সুপার মডেলদের একজন। একদিন ভাই নিজেই ফটোসেশনের জন্য টাকা তুলে দেন রুহীর হাতে।

২০০৬ সালে ফটোগ্রাফার ও ডিজাইনার ফারুক হেলালের কাছে নিজের ফটোসেশন করেন রুহী। এরপরই মিডিয়াতে তার দরজা উন্মোচিত হয়। ভাগ্যবশত প্রথমেই বাংলার মেলার প্রধান ডিজাইনার ইমদাদ হকের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়। একই বছর বৈশাখের একটি ফ্যাশান শোতে র্যাম্প মডেল হিসেবে অংশ নেন তিনি। ধীরে ধীরে সংবাদ মাধ্যমগুলোয় আলোচনায় চলে আসেন তিনি। তারপর আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি টিভি বিজ্ঞাপনের জন্য।

২০০৭ সালে অমিতাভ রেজার পরিচালনায় প্যারাসুটের কান্ট্রি ক্যাম্পেইনের একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর সোহেল আরমানের পরিচালনায় ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’ , গাজী শুভ্রর ‘এলিট পেইন্ট’, আবেদ মল্লিকের ‘গ্রামীণফোন’ বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্য দিয়ে খুব অল্পসময়ে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।

শুধু তাই নয় দেশের নামকরা সব বুটিক হাউস ‘বাংলার মেলা’, ‘মায়াসির’, ‘কে-ক্রাফট’, ‘ড্রেসিডেল’, ‘মান্ত্রা’ ও ‘আড়ং’এর মতো কোম্পানির মডেল হওয়ার সৌভাগ্যও হয় তার। এরপরই অভিনয় জীবনের গল্প। প্রথম অভিনীত নাটক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে আহমেদ সুস্ময় পরিচালিত নাটক ‘অপরিচিতা’।

প্রথম নাটকের অভিজ্ঞতা নিয়ে রুহী বলেন, “সব সময়ই চাইতাম, উপন্যাসভিত্তিক বা ভালো গল্পের নাটকে অভিনয় করব। এই নাটকের গল্প ও আমার চরিত্র পরিচালকের মুখে শোনার পর সত্যিই ভালো লাগছিল। আর আমার চরিত্রের পূর্ণতাও খুঁজে পেয়েছিলাম। সবার সহযোগিতায় অভিনয়টা আমি স্বাভাবিকভাবেই করেছিলাম।”

এরপর শহীদুজ্জামান সেলিমের ‘বৃত্তের ভিতরে একা’, আহমেদ সুস্ময়ের ‘স্বপ্নমুখ’, রিপন নবীর ডেইলি সোপ ‘অচেনা মানুষ’ এবং  গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘অবগুণ্ঠন’ ধারাবাহিক নাটকে ‘গুলবাহার’ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় উঠে আসেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি ঢাকা উইমেন্স ইউনিভার্সিটি কলেজ (উত্তরা) থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করেছেন রুহী। অবসরে বই পড়তে ভালোবাসেন এবং ফ্যাশান ডিজাইনার হিসেবেও ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছে আছে তার। এজন্য শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কোর্সও করেছেন তিনি।

এ মুহূর্তে কয়েকটি বিজ্ঞাপন প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে রুহীর। এর মধ্যে হুন্দাই রেফ্রিজারেটর, নোভা টিভি ও একটি রিয়াল এস্টেট কোম্পানির। এসব বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং শেষ করেছেন। খুব শিগগিরই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এগুলো প্রচার হবে।

এছাড়া ঈদে চ্যানেল নাইনে প্রচারিত হবে বিশেষ নাটক ‘মহামায়া’। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন মাহমুদুল হাসান। এখানে একজন পাখি সমাজ্ঞীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন রুহী।

র্যাম্প, নাটক না সিনেমা কোনটাতে কাজ কতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন? এর উত্তরে রুহী বলেন, “র্যাম্পে কাজ করতে অবশ্যই ভালো লাগে। তবে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেবার সুযোগ থাকে। এছাড়া খুব শিগগিরই কলকাতায় যাবো আমার প্রথম সিনেমা ‘গ্ল্যামার’ এর শ্যুটিংয়ের কাজে। যে কোনো মাধ্যমে ভালো কাজ দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে চাই।”

No comments

Powered by Blogger.