ঘরের সাজে গাছ

বছরের এই একটি ঈদে সবাই চায় ঘর সাজাতে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাই সম্ভব নয়। সেখানে বাড়তি খরচ করা দুঃস্বপ্ন। তাই বলে কি আপনার মনের বাসনা অপূর্ণ থাকবে। কখনই নয়। ঘর সাজান অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট দিয়ে।


অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট বলতে প্রধানত বাহারি পাতার গাছকে বোঝায়। বাহারি গাছের খুব একটা অর্থের প্রয়োজন না। কিন্তু আপনার ঘর স্নিগ্ধ সজীবতায় এক সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে যা দামি ডেকোরেশন পিসের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।
এছাড়া বাহারি পাতার চাষের এক বিশেষ তাৎপর্য আছে। এর সৌন্দর্য কোন ঋতুভিত্তিক নয়, সারা বছর এর সৌন্দর্য বিরাজমান। আমাদের সমতল বাংলার জলবায়ুতে পাতাবাহার খুব ভাল জন্মায়। আর এর রূপ খোলে বর্ষা মাসে। বিভিন্ন প্রকার অর্নামেন্টাল প্ল্যান্টের প্রজাতির সংখ্যা অনেক এবং এদের বেশিরভাগই বেশ কষ্ট সহিষ্ণু। এদের মধ্য আপনার পছন্দেরটি বেছে নিন।

চারা তৈরি
অন্যান্য গাছের তুলনায় এই সমস্ত গাছে চারা তৈরি করা খুব সহজ। সাধারণত কাটিং বা বাল্ব দিয়েই এদের চারা তৈরি হয়। তবে কিছু কিছু প্রজাতির বীজ পুঁতেও চারা খাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হয় যে কোন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা।

মাটি তৈরি
তিন ভাগ ভারি দোআঁশ মাটির সঙ্গে একভাগ গোবরসার বা কম্পোস্ট সার, টব হিসাবে অল্প পরিমাণে গুঁড়ো খোল (সরষে বা নিম), হাড়গুঁড়ো, স্টেরামিন মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণকে আর্দ্র অবস্থায় তিন সপ্তাহ স্তূপাকারে রাখার পর টবে ভরে গাছ লাগাতে হবে। প্রথমে গাছ ছোট টবে (৫ ইঞ্চি) লাগাতে হবে। তারপর গাছ বৃদ্ধি অনুযায়ী টব পরিবর্তন করতে হবে।

পরিচর্যা
প্রধানত সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয় বলে স্থানান্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য টবেই এদের ভাল পরিচর্যা করা যায়। এই সমস্ত গাছে পানি দেয়ার কাজটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। টবের মাটিতে পানির টান পড়ার আগেই পানি দেয়া উচিত। চারা লাগানোর এক বছর পর থেকে প্রতি টবে বছরে একবার চাপানসার (গোবরসার ও সরষের খোল স্টেরামিন) ও ৪-৬ বার তরল সার (খোলের পানি) প্রয়োগ করা উচিত। যেহেতু গাছের কেবল পাতারই সৌন্দর্য, সেজন্য গাছের সাধারণ পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে যাতে রোগ পোকা পাতার সৌন্দর্য নষ্ট না করে। কোন পাতা নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা কেটে বাদ দিতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না দাঁড়ায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। অল্প সময়ের জন্য সকালের বা বিকেলের রোদ পায় এমন জায়গায় এই প্ল্যান্ট চাষের পক্ষে আদর্শ জায়গা। তবে সারাবছরই হালকা ছায়া থাকে এমন জায়গাতেও টবগুলো রাখা চলে। প্রয়োজন মতো ঘরের ভেতর গাছগুলোকে রেখে সাজিয়ে আবার ২-৩ দিনের মধ্যেই বাইরে বের করে দিতে হবে।

প্রতিষেধক
প্রতিষেধক হিসাবে মাসে একবার করে ছত্রাকনাশক ও একবার করে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

গাছের পরিচয়
অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট বলতে সবার প্রথমে মনে পড়ে ক্রোটন জাতীয় গাছ। এদের পাতায় লাল, হলুদ, কমলা, সিন্দুর প্রভৃতি রঙের সমাবেশ খুবই বৈচিত্র্যময়। ক্রোটনের মতো কোনিয়ামেরও পাতা নানা বর্ণের হয়। ঘর সাজানোর জন্য ডাইফেনবাচিয়া একটি জনপ্রিয় প্রজাতি। পাতা খুব বড়। সবুজ পাতার ওপর শিরা বরাবর সাদা ছোপের বাহার খুবই দৃষ্টি আকর্ষক।
অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট হিসাবে সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় লতা হলো মানি প্ল্যান্ট। যার বাংলা নাম পুরবী লতা। এছাড়া আরও কিছু লতা আছে, যেমন ফিলোডেন্ড্রন, মনোট্রপা, মনেস্টেরিয়া। এদের পাতার রঙ ও আকৃতি খুবই বাহারি। ঝোলানো টবে করেও কিছু লতা চাষ করে বাড়ি বা অফিস অলঙ্করণ করা যায়।
মেরীনা চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.