বেইলী রোড আর আজিজ মার্কেটে দেশী পোশাকের সমাহার- ঈদ বাজার- মিলছে রমণীদের প্রিয় শাড়ি ও তরুণদের নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট by এম শাহজাহান

বেইলী রোডের নাটক পাড়ায় এখন আর নাটক মঞ্চস্থ হয় না। আজিজ মার্কেটের সেই চিরচেনা কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডায়ও ভাটা পড়েছে। তবে রাজধানীর এই দুই জায়গা ‘বিশেষ পোশাকের’ মার্কেট হিসেবে নগরবাসীর কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।


বেইলী রোড মানেই রমণীদের প্রিয় শাড়ি এবং তরুণদের পাঞ্জাবি ও টি-শার্টের কথা এলে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে শাহবাগের আজিজ মার্কেটের কথা। ভারত ও চীনের পোশাকের আধিপত্য থেকে রক্ষা করে এই দুই মার্কেটে সম্পূর্ণ দেশীয় পোশাক-আশাক বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদ পোশাকে ভরপুর রাজধানীর এ দুই মার্কেট।
আজিজ মার্কেট মানেই তারুণ্যের জয়জয়কার। তরুণদের সব পোশাক পাওয়া যায় এখানে। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, পলো শার্ট ও ট্রাউজার থেকে শুরু করে বাচ্চাদের সব পোশাক পাওয়া যায় এই মার্কেটে। জেন্টস আইটেমের পাশাপাশি সম্প্রতি কিছু লেডিস আইটেমও তোলা হয়েছে আজিজ মার্কেটে। এই মার্কেটের পোশাকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পোশাকের কাপড় সম্পূর্ণ দেশী। কাপড়গুলো সংগ্রহ করা হয়েছে কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে। দেশী কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ডিজাইন ও কালারের সমন্বয় করা হয়েছে। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবের ডিজাইন করা পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরাও বিভিন্ন ডিজাইন দিয়েছেন। ফলে এই মার্কেটের বেশির ভাগ ক্রেতা হচ্ছেন তরুণ। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছুটে আসছেন আজিজ মার্কেটে। তবে এখনও মার্কেট জমেনি বলে হতাশা রয়েছে এই দুই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলছেন, ১৫ রোজার পরও ক্রেতাদের সমাগম সেভাবে হয়নি। ঈদ মার্কেট শুরু হয়েছে বলে মনে হয় না।
এ প্রসঙ্গে আজিজ মার্কেটের নক্ষত্র ও প্রচ্ছদ ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোঃ বোরহান উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে আজিজ মার্কেট নতুন রূপে সেজেছে। নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক তোলা হয়েছে। কিন্তু এখনও ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আজিজ মার্কেটের সব পোশাক দেশী কাপড়ের তৈরি। মালিকরা কাপড় কিনে পরবর্তীতে বিভিন্ন ডিজাইনার দ্বারা ডিজাইন করে পোশাক তৈরি করে থাকেন। তরুণরা বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেসব পোশাক পছন্দ করে তাই কালেকশন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্ররাই এখানে কেনাকাটা করে থাকেন।
জানা গেছে, আজিজ মার্কেটে প্রায় ২২০টি পোশাকের দোকান রয়েছে। এখানে সর্বনিম্ন ৮৫০-১৫৫০ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি বিক্রি করা হচ্ছে। শার্ট বিক্রি হচ্ছে ১০৫০-১২৫০ টাকা। এছাড়া আজিজ মার্কেট ঈদ উৎসব সেøাগান সামনে রেখে প্রথমবারের মতো র‌্যাফেল ড্র ছাড়া হয়েছে। ৫০০ টাকার কেনাকাটা করলেই দেয়া হচ্ছে ১টি লাকি কুপন। লাকি কুপনের মাধ্যমে ভাগ্যবান বিজয়ীরা ৭ সপ্তাহে পাবেন ৭টি মোবাইল ফোন সেট।
এদিকে এত আয়োজনের পরও বেচাবিক্রি না বাড়ায় হতাশা বিরাজ করছে দোকানদারদের মধ্যে। তাদের আশঙ্কা এ বছর বেচাবিক্রি শেষ পর্যন্ত কমই হবে। কারণ সাধারণ মানুষের ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। এছাড়া শেয়ার বাজার ধসের কারণে বেশির ভাগ তরুণ ও ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। এ প্রসঙ্গে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ম্যানেজার মোঃ এএইচ জনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে এখানকার দোকানগুলো নতুন কাপড়-চোপড় ও নতুন ডিজাইন এনেছে। ভাল ভাল পোশাকের সংগ্রহ বাড়ানো হয়েছে কিন্তু এখনও বেচাবিক্রির তেমন ভাল খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আশা করছি ২০ রোজার পর হয়ত বেচাবিক্রি বাড়তে পারে।
এদিকে রমণীদের প্রিয় শাড়ির জন্য বরাবরই বেইলী রোডের কদর রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এখানে গত ২ আগস্ট শুরু হয়ে রবিবার পর্যন্ত ৪ দিনব্যাপী হয়ে গেল আন্তর্জাতিক বুটিক মেলা। ভারত ও পাকিস্তানের বুটিক শিল্পের উদ্যোক্তারা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বুটিক হাউস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এ মেলার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি পলি রশীদ জনকণ্ঠকে বলেন, চারদিনের বুটিক মেলা সফল হয়েছে। আগামীতে পুরো রমজান জুড়ে যাতে এ মেলা করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বেইলী রোডের টাট্কা তাঁতের শাড়ি, জামদানি, ধুপি সিল্ক, চোসা, ঐহিত্যবাহী টাঙ্গাইল বুটিব, আলগাপাড়, তাঁত বালুচুরি এবং রংধনুসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি মহিলাদের অতি প্রিয়। বেইলী রোডের শাড়ির দোকানগুলো এখন বেচাবিক্রির জন্য প্রস্তুত কিস্তু সেভাবে ক্রেতা আসছে না এখানে। তবে দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির হাউসের তথ্যমতে, জামদানি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, তাঁতের শাড়ি ৬শ’ ৩০ থেকে ৩ হাজার, টাঙ্গাইল সিল্ক সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার, টাঙ্গাইল হাফ সিল্ক ১২শ’ থেকে ৫ হাজার, মিরপুর কাতান ২৭শ’ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া সুতির ওপর হাতের কাজ করা টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ১৫শ’ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। সাড়ে ১২শ’ থেকে ৮ হাজার মধ্যে টাঙ্গাইলের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেল, বেইলী রোডের শাড়ির দোকানগুলোও প্রায় ক্রেতাশূন্য। হাতে গোনা কিছু ক্রেতা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে শাড়ি দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। এখানকার ১৮-২০টি শাড়ির দোকানেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। বুনন, ঝলক, বধুয়া, প্রিয়দর্শিনীসহ এখানকার সব দোকানদারের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির হাউসের সেলস এক্সিকিউটিভ তাহমিনা জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর এখনও ঈদের বিক্রি শুরু হয়নি। তাছাড়া শাড়িসহ জীবনধারণের সব পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় মার্কেট হওয়ার কারণে এখন আর অনেকেই বেইলী রোডে আসছে না। বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য এটাও একটা কারণ। তবে আগামী ২০ রমজানের পর মার্কেট জমে উঠতে পারে বলে তাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.