পদ্মা সেতু নির্মাণে তিন সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রস্তাব মালয়েশিয়ার-বিশেষ দূতের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রীর বৈঠক

যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়া একটি প্রাথমিক চুক্তি প্রস্তাব পেশ করেছে। তারা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেবে। রবিবার সচিবালয়ে মালয়েশিয়ার বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।


যোগাযোগমন্ত্রী মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত এস সামি ভেলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল প্রাথমিক চুক্তি প্রস্তাব পেশ করেছে। এই চুক্তির প্রস্তাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় কী পরিমাণ খরচ হবে, কিভাবে তা রিটার্ন হবে, সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে মালয়েশিয়া একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব দেবে।
চুক্তির প্রস্তাবে কি কি বিষয় উল্লেখ রয়েছে, জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত প্রস্তাব না আসা পর্যন্ত চুক্তি প্রস্তাব নিয়ে কিছু বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এ বিষয়ে কথা বলতে কিছু কৌশলগত সমস্যাও রয়েছে।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, চুক্তি প্রস্তাব নিয়ে সেতু ভবনে দুই দেশের কারিগরি কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে এর বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। আর মালয়েশিয়ার চূড়ান্ত প্রস্তাব আসার পর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কারিগরি কমিটি তা যাচাই করবে। কমিটি যাচাই করার পরে সে সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে। পরে এই প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কৌশলগত কারণ দেখিয়ে কিছু বলেননি। তবে চূড়ান্ত প্রস্তাবে দুই দেশই লাভবান হবে এমন ধারণা দিয়ে বলেন, চূড়ান্ত প্রস্তাবে দুই দেশের জন্যই ‘উইন উইন’ হবে বলে আশা করছি।
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কিনা জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, সরকার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি, নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি অন্য কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তা না করব কেন? পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশী-বিদেশী অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা কোন কিছুই বাদ দিইনি ও গ্রহণও করিনি। এখনও বিকল্প অর্থায়নের আলোচনা চলছে।
এ ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের নেতৃত্বে একটি জোট (কনসোর্টিয়াম) গঠনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর বিষয়ে কোন সময় উল্লেখ করেছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া এ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ঠা-া মাথায় এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত ও জনস্বার্থের অনুকূলে হয় এমন ধরনের সিদ্ধান্তই নিতে হবে।
যোগাযোগমন্ত্রী আরও জানান, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সন্ধ্যায় ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন। এ ছাড়া সোমবার বিকেলে আবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে রবিবার দুপুরে মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে এক সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। অর্থমন্ত্রী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, আমি কিছু বলব না, যা বলার যোগাযোগমন্ত্রীই বলবেন। এর বাইরে অর্থমন্ত্রী আর কিছু বলেননি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টি ঝুলে যাওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১০ এপ্রিলে কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। গত ২৮ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় পক্ষ থেকে একটি খসড়া প্রস্তাব সরকারকে দেয়া হয়।
গত ২৯ জুন দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি তুলে বিশ্বব্যাংক ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে ঋণ বাতিল করে। এই প্রকল্পে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের এই ঘোষণার পরও সংস্থাটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। এ প্রকল্পে ঋণ দেয়ার চুক্তি করা অপর দুই সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ছিল। আর বাকি অর্থের যোগান দেয়ার কথা ছিল সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.