যুক্তরাষ্ট্র দলে নানি-দাদিরাও আছেন! by কামরুল হাসান

কী বলছ তুমি? টেন্ডুলকার? নাহ্, আমার কাছে লারাই সেরা। ভিভ রিচার্ডসকেও খুব পছন্দ।' ডরিস ফ্রান্সিস কিছুতেই মানতে চাইলেন না যে ভারতের ব্যাটিং-ঈশ্বরের সঙ্গে এখন আর কারো তুলনা চলে না। শুধু এখনকার ক্রিকেটে নয়, তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন। পরিসংখ্যান-রেকর্ড সব কিছু তুচ্ছ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মহিলা দলের অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন!অন্ধ সমর্থন। সেটা অবশ্য যে কেউই বুঝতে পারবে। কিন্তু মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব খেলতে নিজের দল নিয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসা সে দেশের অধিনায়কের এমন 'লারাপ্রীতি'র কারণটা কী? আসলে ফ্রান্সিস ইউএসএর নাগরিকত্বটা পেয়েছেন বেশি দিন হয়নি।


জাতে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, একেবারে খাঁটি ডমিনিকান বংশোদ্ভূত। এই তো ২০০৫ মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটেই খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। ব্রায়ান লারার দেশের একজন হয়ে যদি লারাকে টেন্ডুলকারের চেয়ে এখনো ওপরে রাখেন সেটা কি খুব দোষের কিছু?
ফ্রান্সিস একা নয় অবশ্য। এ দলটাতেই নানা দেশের বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে আসা ১৪ জনের দলে ছয়জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ছয়জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আর একজন পাকিস্তানি। বেসবলের দেশে যেখানে পুরুষ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়তে গেলেই হন্যে হয়ে খেলোয়াড় খুঁজতে হয় সেখানে মহিলা দলে ক্রিকেটার আসবে কোথা থেকে? 'টুকটাক ক্রিকেট জানা' অনেকেই তাই ঠাঁই পেয়ে গেছেন জাতীয় দলে! ১৭ বছর বয়সী থেকে শুরু করে আছেন দুজন পঞ্চাশোর্ধ্বও! অভিজ্ঞতা আর পেশাদারিত্বের এ অভাবটা স্বীকার করলেন দলের ম্যানেজার লুইস ব্রাউনি নিজেও, 'আসলে ক্রিকেটটা আমেরিকায় এখনো খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কদিন আগেও আমরা দেখতাম শুধু ভারতীয় এলাকাগুলোতে ছেলেমেয়েরা ক্রিকেট খেলছে।' দলেও তাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারদের আধিপত্য। যদিও তাঁদের বেশির ভাগেরই খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এদিক দিয়ে ফ্রান্সিস নিজে আবার একটু ব্যতিক্রম। ক্রিকেটটা সেই অর্থে তাঁর পেশা নয়, কিন্তু খেলছেন অনেক দিন ধরে। ডানহাতি এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাঝেমধ্যে মিডিয়াম পেস বলও করেন। ডমিনিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন সেই ২৫ বছর বয়স থেকে, তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বিশ্বকাপ, এখন যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়কত্ব। নিজের সংসার আর বেবি সিটিংয়ের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেট খেলে যে এত দূর আসতে পেরেছেন সেটা খেলাটার প্রতি নিখাদ ভালোবাসার কারণেই।
দলের বাকি কারোই অবশ্য তাঁর মতো নিয়ম করে ক্রিকেট খেলার অভ্যাস নেই। থাকার কথাও না। পঞ্চাশোর্ধ্ব যে দুজন আছেন তাঁর মধ্যে একজন গ্রেস শেডারটন-রিচার্ডসের তো রীতিমতো নাতি-নাতনি আছে! ৫৪ বছরের এ ভদ্রমহিলা অবসর জীবনযাপন করছেন। আরেকজন জোয়ান সেরেনাও পেশায় নার্স। তাঁরা সবাই ক্রিকেট খেলেন কেবল শনি-রবিবার ছুটির দিনে। এই করেই জাতীয় দলে এবং এঁদের নিয়েই বাছাই পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ফ্রান্সিস!
কাজটা কঠিন হয়ে গেল না? প্রশ্ন শুনে যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক হেসে দিলেন, 'হ্যাঁ, তা তো হবেই। আমরা তো সবাই সবাইকে চিনলামই মাত্র সপ্তাহ দুয়েক হলো। বাংলাদেশে আসার আগে বার্বাডোজে একটা ক্যাম্প করেছিলাম তিন দিনের জন্য। সেখানেই জানতে পেরেছি কারা আছে দলে। অনেকের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ও।' কথা সত্যি। আমেরিকা অঞ্চল থেকে কানাডাকে হারিয়ে বাছাই পর্বে জায়গা করে নিয়েছিল যে দলটা তার মাত্র চারজন আছেন এই দলে। বাকি সবাই নতুন। সপ্তাহ দুয়েক আগের পরিচয়টা তাই ঝালাই করে নেওয়া চলছে এখনো। এরই ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের শক্তি আর দুর্বলতাগুলো যাতে বুঝে নেওয়া যায় সে কারণেই একটু আগে বাংলাদেশে চলে আসা। একসঙ্গে যত বেশি অনুশীলন করা যায় ততই লাভ।
তবে এভাবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নটা আসলেই একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ব্রাউনি-ফ্রান্সিস দুজনেই সেটা জানেন। তার পরেও কখনো বিশ্বকাপে না খেলা দলটার ম্যানেজার-অধিনায়ক কারো উৎসাহের কোনো কমতি নেই। আর যাই হোক এ টুর্নামেন্ট থেকে তো তাদের হারানোর কিছু নেই। যা হবে সবই প্রাপ্তি!

No comments

Powered by Blogger.