স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-টিটোর আত্মদানের স্বীকৃতি মেলেনি দুই যুগ পরও by নাসরুল আনোয়ার,

মানুষের কল্যাণ ছিল তাঁর একমাত্র আরাধ্য। কথা বলতেন মানুষের শোষণ-বঞ্চনা নিয়ে। স্মিত হেসে সবাইকে আপন করে নিতেন। ধনাঢ্য পরিবারের শিক্ষিত ছেলে হয়েও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পাটকলে বস্তা সেলাই, চা-সিঙ্গাড়া বিক্রির বিচিত্র পেশা। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। নাম তাঁর সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটো। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার মোল্লাপাড়ায়। ২৪ বছরেও টিটোর লাশের হদিস মেলেনি।


সম্মিলিত বিরোধী জোটের ওই দিনের কর্মসূচি প্রতিহত ও বানচাল করতে এরশাদ সরকার ট্রেন, বাসসহ সারা দেশের যোগাযোগ অচল করে দিয়েছিল। সে কারণে অবরোধের আগের দিন টিটো বাইসাইকেলে করে ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৯ নভেম্বর কয়েকজনসহ প্রায় ১২৫ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেলে পাড়ি দিয়ে তিনি বাজিতপুর থেকে ঢাকায় পেঁৗছান।
টিটোর পরিবার, সংগঠন ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ নভেম্বর তোপখানা রোডে পুলিশের গুলিতে টিটো শহীদ হন। ১১ নভেম্বরের খবরের কাগজে নূর হোসেন ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের লাশের ছবি ছাপা হয়। কিন্তু ওই দিন টিটোর লাশ শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ তাঁর লাশ গুম করে ফেলে।
টিটোর বাবা সৈয়দ শামসুল হুদা এখনো ছেলের লাশ খুঁজে ফেরেন। কেঁদে কেঁদে মা রহিমা বেগমের চোখও ঝাপসা হয়ে গেছে। বয়সের ভারে দুজনই ক্লান্ত। তবে তাঁরা এখনো বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর আগে হলেও টিটোর লাশের হদিস পাবেন। শামসুল হুদা কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কারো কাছে করুণা ভিক্ষা করেননি। এমনকি চাননি রাষ্ট্রীয় বিশেষ কোনো মর্যাদা বা সম্মান। কেবল লাশের খবর আর টিটোর আত্মদানের স্বীকৃতি চান তিনি। তাঁর শেষ ইচ্ছা, টিটোকে যেখানে সমাহিত করা হয়েছিল, সেই স্থানটি তিনি একটিবার দেখে যেতে চান। তিনি মনে করেন, ১১ নভেম্বর পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিটি টিটোরই ছিল।
কথা বলে জানা যায়, সন্তানের লাশের খবর জানতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের কাছে বহুবার আবেদন করেছেন। তাঁর আর্তি কেউ শোনেননি।
স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের বিজয় সমাবেশে শহরের একটি সড়ক টিটোর নামে নামকরণের দাবি ওঠে। সমাবেশে তা সমর্থনও পায়। সেই গণদাবি ২৪ বছরেও পূরণ হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.