সার্কে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে চীনকে সমর্থন বিএনপির : খালেদা জিয়ার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের চীনা প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরাম সার্কে চীনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে শক্তিশালী চীনের ওপর। বেগম খালেদা জিয়া ‘এক চীন’ নীতির প্রতিও তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। গতকাল সকালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা এ ব্যাপারে তার সমর্থনের কথা জানান।বৈঠকের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ চায় চীন। এই বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।


বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে চীন সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করবে।
গতকাল মালদ্বীপে সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। বর্তমানে চীন সার্কের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে।
মির্জা ফখরুল জানান, এ বৈঠকে খালেদা জিয়া চীনের নেতাকে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চীন সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। চীনের অবিস্মরণীয় উন্নয়নে বিএনপি সব সময় গর্ববোধ করে। চীন গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে।
সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ৫০ মিনিটের বৈঠকে কক্সবাজারের অদূরে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রেলওয়ে, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুত্, পানিসম্পদ, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে চীনের সহযোগিতা চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে একটি ত্রিমাত্রিক নৌশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টিও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
বৈঠকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পার্টির বেইজিং কমিটির সম্পাদক লিউ সি। চীনের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস মিনিস্টার লিউ জি ইউ, স্ট্যান্ডিং মেম্বার লি সি জিয়াং, লু উই, লি ঝিজুং, জাও হুইমিং, জিয়াং পেইমিং, লু ইয়ান, ঝাং জু ই, লিন হং, ডিং জুই হুর এবং মা জুয়েসং। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জিয়ানিও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।
গত ৮ নভেম্বর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেও তাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে।
কুনমিং-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গ : ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সফররত নেতাকে বলেছেন, বাংলাদেশ মনে করে কুনমিং-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এই সড়ক যোগাযোগের ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল জানান, খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশ ও বিএনপি ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাসী। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই আমরা মনে করি। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে আমরাও দেখতে চাই।
জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন : মির্জা ফখরুল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। এছাড়া অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবের প্রতিকারে চীনের কারিগরি সহযোগিতাও চেয়েছেন খালেদা জিয়া।
তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চীনের নেতা বেগম জিয়ার প্রস্তাব আগ্রহের সঙ্গে শুনেছেন। তিনি বেগম জিয়া ও তার দল বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ই এই সুসম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, যা এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। চীনের নেতা খালেদা জিয়াকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন তা শুধু বিবেচনাই নয়, বরং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেগম খালেদা জিয়া নয় বার চীন সফর করেছেন, এ কথা লি স্মরণ করেছেন। এতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিএনপির মধ্যে একটি হৃদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, বিএনপি প্রতিনিধি দলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সে দেশের নেতারা। দু’দেশের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও দুই নেতা একমত হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সরকারের কোনো সমালোচনাও তারা করেননি। যেহেতু তারা বিদেশি অতিথি, তাই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা সমীচীন নয়।

No comments

Powered by Blogger.