সিরিয়ায় গণআন্দোলন : প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন প্রত্যাশিত : যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন ‘প্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সিনেট প্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেফরি ফেল্টম্যান বলেন, আরব দেশগুলোর প্রায় সব নেতা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা প্রায় সবাই একই কথাই বলছেন যে, আসাদের শাসন শেষ হয়ে এসেছে। এটি প্রত্যাশিত। এদিকে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরব লিগ ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে। সিরিয়া সরকার আরব লিগের শান্তির নীলনকশা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এবং হোমসে রক্তপাতের ঘটনার পর এ চাপ সৃষ্টি হয়।


যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেফরি ফেল্টম্যান আরও বলেন, আরব দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার দ্রুত পদত্যাগে উত্সাহিত করতে আসাদকে নিরাপদ আশ্রয়েরও প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কোন কোন দেশ আসাদকে নিরাপদ আশ্রয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে সেগুলোর নাম উল্লেখ না করলেও জেফরি আশা করছেন, আসাদ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দামেস্কে এক বিক্ষোভকারীর দাফন চলাকালে সেনাবাহিনীর গুলিতে আটজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউটিউবে প্রকাশিত সিরিয়ান রেভ্যুলুশনারি জেনারেল কমিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বারজেহ এলাকায় কয়েকজন সেনা ও পুলিশ শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেয়া জনতার ওপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে গুলি করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত আন্দোলনকারী বাসাম আবদেল করিম বারাহের দাফনে যোগ দিয়েছিল তারা। অপর একটি ভিডিওতে আহত ব্যক্তিদের মাইক্রোবাসে তুলতে দেখা গেছে। হোমস ও হামা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আরও ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে লোকাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি জানিয়েছে। এছাড়া বুধবার সেনারা হোমস শহরের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে কয়েকশ’ ব্যক্তিকে আটকও করেছে। গত সাত মাস ধরে চলা প্রেসিডেন্ট আসাদবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীতে সংঘটিত ভয়াবহ ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তবে মৃত্যুহার বৃদ্ধি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাসহ আন্তর্জাতিক নানামুখী চাপ এবং অভ্যন্তরে বিদ্রোহ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অব্যাহত থাকলেও ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিতই দিচ্ছেন না আসাদ।
২০০০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর নিজ অবস্থান পাকাপোক্ত রাখতে আসাদ ইরানের শিয়াদের সঙ্গে জোট, আরব দেশগুলোর সমর্থন ও ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্ব এড়াতে তার পিতার দেখানো পথই অনুসরণ করা শুরু করেন। গত ২ নভেম্বর আরব লিগের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিষয়ে সিরীয় সরকার সম্মত হলেও কার্যত তা বাস্তবায়নের কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। আরব লিগ প্রস্তাবিত চুক্তিতে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিরিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার, রাজবন্দিদের মুক্তি এবং আরও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর অঙ্গীকার করা হয়েছে।
সরকারবিরোধী সিরীয় জাতীয় পরিষদ (এসএনসি) এক পত্রে আরব লিগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সিরিয়া বিশেষত হোমসে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এসএনসি চায় আরব লিগ যেন সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে, দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এসএনসি’র সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরব লিগের প্রতি আহ্বান জানান। হেগ বলেন, সিরীয় সরকার চুক্তি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আমি এর বিরুদ্ধে দ্রুত ও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আরব লিগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আরব রোডম্যাপে সহিংসতা বন্ধ, আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, নগর এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার, পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগের পাশাপাশি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.