মডেল আদৃতা হত্যাকাণ্ড-ঢাবি ছাত্র রেহান গ্রেপ্তার মামলা ডিবিতে

র‌্যাম্প মডেল তাহিয়া তাবাসসুম আদৃতা হত্যায় জড়িত সন্দেহে তাঁর প্রেমিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রেহানকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় জেনেসিস ভিউ অ্যান্ড মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বরুণসহ তাঁর চার কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ডিবি। এদিকে মামলার তদন্তভার মোহাম্মদপুর থানা থেকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।


ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।' তিনি জানান, গ্রেপ্তার রেহান নিজেও একজন র‌্যাম্প মডেল। গত সোমবার রাত পৌনে ১০টায় মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের সি ব্লকের একটি ভবনের ছাদসংলগ্ন সিঁড়ি থেকে আদৃতার লাশ উদ্ধার হয়। অভিযোগ উঠেছে, পরিচয় পাওয়ার পরও পুলিশের অবহেলার কারণে বেওয়ারিশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম তাঁর লাশ দাফন করে।
এদিকে আদৃতা খুনের ঘটনায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আসছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর দক্ষিণ গোড়ানের ৮ নম্বর গলির এফ ব্লকের ২ নম্বর বাসায় গিয়ে এ বিষয়ে কথা হয় আদৃতার মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। আদৃতার মা হাবিবা আক্তার বেবি বলেন, 'আমার মেয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। তাকে আর ফিরে পাব না। তবে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পুলিশ ইচ্ছা করলে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারে।'
পারিবারিক সূত্র জানায়, আদৃতা নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন নিজের কম্পিউটার (ল্যাপটপ) তাঁর এক বন্ধুকে দিয়ে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, ল্যাপটপটি তিনি রেহানকে দিয়ে দেন। ওই ল্যাপটপে আদৃতার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য ছিল। পরের দিন (৩০ অক্টোবর) তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে খুন হন। এই খুনের সঙ্গে ওই ল্যাপটপের সম্পর্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আদৃতা তাঁর নিজের ব্যবহার করা পাঁচটি মোবাইল ফোন নিয়ে বের হন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর পাঁচটি ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। আদৃতা যা করতেন এর সব কিছুই রেহান জানতেন।
পরিবারের সদস্যরা আরো জানায়, গত ৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান ১০ দিনের মধ্যে আদৃতার খুনিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা এ কথা বলার পর সাত দিন চলে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি বলেন, 'এ ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।'
আদৃতার মামা গোলাম কুদ্দুস জানান, ঘটনার পর আদৃতার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। বিষয়টি পুলিশের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। পরিবার থেকে এখনো কেন মামলা করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঘটনার তিন দিন পর আঞ্জুমানের মাধ্যমে লাশ দাফন করা হলে পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে বিষয়টি জানতে পারে। এরই মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিবার থেকেও একটি মামলা করা হবে।
পরিবারসহ পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, আদৃতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর প্রেমিক রেহানসহ জেনেসিস ভিউ অ্যান্ড মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মালিক বরুণসহ আরো অনেকে জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.