রাজবাড়ীতে জমি নিয়ে বিরোধে এসআই ও সোনারগাঁয়ে ছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু : পৃথক হামলা সংঘর্ষে আহত দু’শতাধিক

মিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে বিভিন্ন স্থানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ীতে প্রতিপক্ষের হামলায় সিআইডির এক এসআই, নারায়ণগঞ্জের সোনারাগাঁয়ে কলেজছাত্র, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মারা যান আরেক ব্যক্তি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় ১ ব্যক্তি নিহত হয়। অন্যান্য স্থানে পৃথক হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িতে। বিস্তারিত আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :


কালুখালীতে জমি নিয়ে সংঘর্ষে এসআইয়ের মৃত্যু : রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আবদুুর রাজ্জাক (৫৩) নামে সিআইডি পুলিশের এক এসআই খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬ জন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দোকানপাট ভাংচুর ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৃগী বাজারের হাশেম আলীর রাইস মিল সংলগ্ন জমিতে কেউ ঘর তুলছে, এমন খবরে এসআই আবদুর রাজ্জাক ও তার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাধা দেন। এ নিয়ে আবদুর রাজ্জাক ও হাশেম আলীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে আবদুর রাজ্জাক মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা সিআইডি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঈদের ছুটিতে ৫ নভেম্বর গ্রামের বাড়ি পাতুরিয়ায় যান।
এদিকে আবদুর রাজ্জাকের আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বড় পাতুরিয়া এলাকার কয়েকশ’ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে হাশেম আলীর রাইস মিল ও তার ভাই রাকিব আলীর ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ভাংচুর চালায়। এরই মাঝে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা হাশেম আলীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে হাশেম আলী ও তার ভাইদের ৯টি টিনের ঘর ভস্মীভূত হয়।
শাহজাদপুরে নিহত ১ আহত ৩০ : জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও গ্রামে প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে শাহজাদপুরের রূপবাটি ইউনিয়নের কুলিয়ারচর গ্রামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। ওই এলাকার হানিফ প্রামানিক ও তারা প্রামানিক গ্রুপের মধ্যে বুধবার দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই ব্যক্তি মারা যান। আহত হন উভয় পক্ষের আরও অন্তত ৩০ জন। নিহতের নাম আবু হানিফ প্রামানিক (৫০)। আহতদের মধ্যে জুয়েল, নজরুল, রুবেল, আশকর, রিপন, আজম, মজিদ, মতিন, উজ্জ্বল, ছামাদ, ফজলুকে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ১০টি বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন একে অপরের বাড়ি থেকে ধান, চাল, গরু-বাছুর ও নগদ টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ গতকাল সকালে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
সোনারগাঁয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু : মাত্র দেড় শতাংশ জমির জন্য সোনারগাঁ উপজেলার মুছারচর গ্রামে বুধবার রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মফিজুল ইসলাম (১৮)। এই হামলায় আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুছারচর গ্রামের শহিদুল্লাহ মিয়া ও তার চাচাতো ভাই জুলহাস মিয়ার মধ্যে একখণ্ড জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর মীমাংসা হওয়ার আগেই জুলহাস মিয়া মারা গেলে শহিদুল্লাহ মিয়া বুধবার বিকালে তার বাড়িতে সালিশ ডাকে। এতে জুলহাস মিয়ার ছেলে জাহিদ, নজরুল, আলমগীর, আসাদ ও বাশার উপস্থিত না হয়ে রাতে তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শহিদুল্লাহ মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা কুপিয়ে ও পিটিয়ে শহিদুল্লাহ মিয়া, মেয়ে হেলেনা আক্তার, ফিরোজা আক্তার, ছেলে কলেজছাত্র মফিজুল ইসলাম, ইব্রাহিম, রহমত উল্লাহসহ ১০ জনকে মারাত্মক আহত করে। ঘটনার পর বুকে টেঁটাবিদ্ধ কলেজছাত্র মফিজুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গতকাল সকালে নিহতের বাবা শহিদুল্লাহ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের আড়াইহাজারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার বিকালে উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সাইজাদী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নাটোরে মোটর শ্রমিক অফিস ভাংচুর, সিংড়ায় সংঘর্ষ : নাটোরে অবৈধ ভটভটি চলাচল নিয়ে সিংড়া মোটর শ্রমিক অফিস ভাংচুর ও শ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিংড়া উপজেলা। বুধবার সন্ধ্যায় আলী রাজের নেতৃত্বে ইমান, বাহার, কামরুল, রাব্বানীসহ ৪০ থেকে ৫০ জন লোক ওই ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় দুই ট্রাকচালক বাবু মোল্লা ও সেলিমকে বেধড়ক পেটানো হয়।
এদিকে সিংড়ার শেরকোল বাজারে ভটভটি স্ট্যান্ড সরানো নিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে কমপেক্ষ ৫ জন আহত হয়েছে। ওই ঘটনার জেরে সিংড়া থানায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পূর্বধলায় শিক্ষিকাসহ আহত ৫ : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের বুধি গ্রামে গতকাল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলায় স্কুলশিক্ষিকা এসএম ফেরদৌসীসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পূর্বধলা থানার এসআই আবদুল ওয়াদুদ জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
রাজিবপুরে আহত ১৫ : পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে এক সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকাইয়া পাড়া গ্রামের আলম মিয়া গং ও জাহাঙ্গীর গংয়ের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহতদের রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীনগরে আহত ৩৫, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামে পূর্বশত্রুতার জেরে সরকারবাড়ি ও মৌলভীবাড়ির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ হামলা ও সংঘর্ষে ২৫ জন আহত এবং অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদ মিয়া, খবির মিয়াকে চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে একই উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে পূর্বশত্রতার জেরে গতকাল সকালে জিনদপুর বাজারে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ১০ জন আহত ও ৫টি দোকান ভাংচুর হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কচুয়ায় সন্ত্রাসী হামলা : চাঁদপুরের কচুয়ায় ব্যবসায়ী মো. জহিরুল হকের ওপর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সায়েম, রোমান, সাইফুলসহ ৮-৯ জন হামলা করে ৪ লাখ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। জহিরুলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে কচুয়া থানায় মামলা হয়েছে।
কাপাসিয়ায় দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০ : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের বিবাদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন অভিযোগের তদন্ত নিয়ে গতকাল দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী মাদরাসা সুপার মাওলানা মফিজ উদ্দিন প্রধান ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াজ উদ্দিনকে র্দীঘ সময় অবরোধ করে রাখে। পুলিশ মাদরাসা সুপার মাওলানা মফিজ উদ্দিনকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মাওলানা মফিজ উদ্দিন প্রধানের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ হাশেম প্রধান (৬১) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন ওই মাদরাসায় যান। তদন্ত চলাকালে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সুপার সমর্থিত বড়হর এলাকার একদল যুবক ও ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল বহর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত তদন্তকারী টিম ও বাদীপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলার খবর মাইকে জানানো হলে স্থানীয় গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করলে সভাপতি ও দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।

No comments

Powered by Blogger.