শিল্পপতিদের কোটি টাকার 'পোরশে-ভীতি' by রফিকুল বাহার,

জার্মানির তৈরি দামি ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক জিপ 'পোরশে' আমদানি করে বিপদে পড়ছেন চট্টগ্রামের শিল্পপতিরা। সর্বোচ্চ গতির এ গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও আদরের সন্তানদের হারানোরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার বিকেলে মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমের ছোট ছেলে শাহরিয়ার আরেফিন আলম মিমো। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে ঈদের আগে শখ করে এই গাড়ি কেনা হয়েছিল মিমোর জন্য। মিমো সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কুইন্স মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে দেশে ফিরেছেন।


এ দুর্ঘটনায় শুধু মিমোই আহত হননি, সঙ্গে থাকা তাঁর দুই বন্ধু ইউসুফ ও ফরহাদ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউসুফকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইয়ং ওয়ানের প্রাইভেট বিমানে করে মুম্বাইয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আজ ব্যাংককে যাওয়ার কথা ফরহাদের।
মিমোর বাবা শাহাবুদ্দিন আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পোরশে গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য মিমো এক মাস আগে বায়না ধরে। গাড়ি কিনে দিতে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে মিমো তার মা ও আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। খাওয়া-দাওয়া করছিল না। জেদ ধরেই এই গাড়ি কেনা। কিন্তু এই গাড়ি চালানোর মতো রাস্তা কি আমাদের দেশে আছে?'
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী টোল রোডে কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভারের সঙ্গে পোরশে গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন আরোহী মারাত্মক আহত হন। পোরশে জিপটি পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে গেলেও ভাগ্যক্রমে এখনো বেঁচে আছেন এর তিন আরোহী। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি সাগরের তীর ঘেঁষে ফৌজদারহাটে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যাওয়ার জন্য এই টোল সড়ক নির্মিত হয়। শুধু বন্দরে যাওয়ার জন্য নয়, নগরের ব্যস্ততম প্রবেশপথ এড়িয়ে অনেকেই এই বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে।
প্রায় চার বছর আগে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম পোরশে গাড়ি আনেন দেশের অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ছোট ছেলে ইয়াছিন রহমান। সে গাড়িটিও দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হয়েছিলেন ইয়াছিন। দুর্ঘটনার পর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে সে সময় আনুমানিক দেড় কোটি টাকায় কেনা সেই পোরশেটিও।
পরপর দুটি দামি জিপ এভাবে দুর্ঘটনায় পড়ায় দামি গাড়ি ব্যবহারকারী ধনাঢ্য পরিবার ও গাড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন 'পোরশে ভীতি' দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সর্বোচ্চ গতির এ গাড়ি চালানোর মতো রাস্তা বাংলাদেশে নেই। অনেকে শখ করে এ গাড়ি কিনে আনছেন। শখের কেনা সেই গাড়ি এখন অনেকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।' দেশে দামি গাড়ি কেনাবেচা করেন ঢাকার মোটর ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী ফুয়াদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, 'পোরশে ব্র্যান্ডের গাড়ির কোনো দোষ নেই। দোষ হলো যাঁরা এই গাড়ি চালান তাঁদের। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালায় তরুণ প্রজন্ম। তাতেই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।' তিনি জানান, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ১০টির মতো পোরশে গাড়ি আমদানি হয়েছিল এমপি কোটায়।
দুর্ঘটনার আগের দিন পোরশে গাড়িটি চালিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন মিমোর ফুফাতো ভাই ও এমইবি গ্রুপের পরিচালক সোয়েব রিয়াদ। গাড়ি থেকে নেমে তিনি মিমোকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সোয়েব রিয়াদ বলেন, 'পোরশে চালিয়ে আমি বুঝেছি যে এর গতি অন্য গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের দেশের রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। মিমোকে সাবধানে এই গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়ে মিলাদ পরিয়ে নিতে বলেছিলাম।' মিমোর পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানান, পোরশে জিপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই এ গাড়ির গতি ১২০ কিলোমিটারে পেঁৗছে যায়।

No comments

Powered by Blogger.