টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পাঁচ মাসব্যাপী সংলাপ করবে সিজিএস
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সিজিএস’র সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘সিজিএস জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সংলাপের আলোচনা ও নির্দিষ্ট সুপারিশের সারসংক্ষেপ সবার জন্য প্রকাশ করবে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের কাজ জরুরি। রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান, সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশকে যদি ভবিষ্যতে পুনর্গঠন করতে হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করতে পারবে না। আমাদের প্রত্যেকের ভূমিকা আছে, আসুন সেই ভূমিকা পালন করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত ৫ই আগস্ট থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো যে মিস ইনফরমেশন ছড়াচ্ছে, সেগুলোর সবচেয়ে বড় জবাব হলো সঠিক তথ্য তুলে ধরা। এখানে দেশের গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।’
সিজিএস জানায়, নতুন সরকারের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন ব্যবস্থা সবকিছু সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকরণের শিকার হয়েছে। সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে।’
গবেষণা সংস্থাটি জানায়, গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নীতিমালা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং জ্বালানি খাতে স্বার্থবাদী একটি নেটওয়ার্ক গঠিত হয়, যারা নিজেদের স্বার্থে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ঋণ খেলাপিদের বিচার থেকে রক্ষা করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে বিপদাপন্ন করেছে। সরকারের সঙ্গে যুক্ত একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী জ্বালানি খাতের ভর্তুকি পকেটস্থ করেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
এসবের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উল্লেখ করে সিজিএস জানায়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গণজাগরণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকারের প্রতি বিশাল দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে।
গবেষণা সংস্থাটি আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক-নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে।
এ প্রেক্ষাপটে সিজিএসের পক্ষ থেকে নেয়া উদ্যোগের লক্ষ্য হলো টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংলাপের আয়োজন করা। এই সংলাপগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
এ লক্ষ্যে আগামী ৫ মাসে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। এ সংলাপগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। আর জাতীয় পর্যায়ে সংলাপের অংশ হিসেবে ঢাকায় মোট ৮টি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের বিষয়বস্তুগুলো হচ্ছে-(ক) সংবিধান (খ) মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ (গ) বিচারব্যবস্থা, (ঘ) নাগরিক প্রশাসন, (ঙ) সাংবিধানিক সংস্থাসমূহ, (চ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, (ছ) অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ (জ) গণমাধ্যম।
এছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় চারটি আঞ্চলিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এসব সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিস (সিজিএস)।
No comments