‘বাচ্চারা শুধু ভাত ভাত করে- আমি ভাত পামু কই’

সাবিনা ইয়াসমিনের সংসারে শাশুড়ি, স্বামী ও চার ছেলেমেয়ে আছে। বন্যার পানিতে বাড়ি ঘর ডুবে যাওয়ার পর একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। গত আটদিন সাবিনার চুলায় রান্না হয় না। ছেলেমেয়েরা মায়ের কাছে শুধু ভাত ভাত করে কান্না করছেন। ভাত খুঁজলে মুড়ি-চিড়া খেতে দেন সাবিনা। দুই এক মুঠো মুড়ি খাওয়ার পর আবার ভাতের জন্য কান্নাকাটি করেন।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ ফতেহাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ওই এলাকায় আরও দেখা যায়, বন্যার্তরা যে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ওই স্কুলের মাঠে বুক সমান পানি। ডুবে গেছে স্কুলের টিউবওয়েল ও বাথরুম। রাস্তায় তখনও কোমর সমান পানি। স্কুলের টিনের ঘরের মাঝ বরাবর পানি। স্কুলের মাঠে মাছ ধরছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। স্কুলের ভবনের দু’তলায় ও ছাদে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাকবলিত ১৫টি পরিবার। দু’তলা থেকে সাবিনা হাতের ইশারায় জানান আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান। বুক সমান পানি দিয়ে তিনি রাস্তায় ছুটে যান। তার সঙ্গে যান ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে শ্রাবন্তি। পরিবারের সঙ্গে তারও ঠাঁই হয়েছে স্কুলের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। ক্ষুধায় অনবরত কান্নাকাটি করছে শ্রাবন্তি। কান্না স্বরে ছোট্ট শ্রাবন্তি বলেন, আংকেল আমি ভাত খাব, মা ভাত খুঁজলে শুধু মুড়ি-চিড়া দেয় খেতে। এগুলো খেতে খেতে মুখ ব্যথা করে। আর খেতে পারি না। আপনি আমাদের জন্য ভাত নিয়ে আসেন।

সাবিনা ইয়াসমিন আকুতি স্বরে কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন্যার পানিতে ঘরের সব ভাইস্যা গেছে। ঘরে কিছু চাইল ডাইল ছিল তাও আনতে পারিনি। কোনো রকম স্কুলে আইস্যা উঠছি। বাচ্চারা শুধু ভাত ভাত করে, মুড়ি-চিড়া দিলে দুই এক মুঠ খেয়ে আবার ভাত খুঁজে আমি ভাত আইন্ন্যা দেমু কই থেকে। ভাতের লাইগ্যা সারা দিন চিল্লাচিল্লি করে। আমি নিজেও আট দিন ধরে মুড়ি চিড়া খাই, এখানে পানি নেই, বাথরুম নেই, একটা হাহাকার লেগে আছে। মুড়ি খেয়ে যে একটু পানি খাব তাও পারি না। এত ভিতরে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসতে চায় না। বৃদ্ধা শাশুড়ি বিছানায় পেঠের ক্ষিধায় কাতরাচ্ছে, স্বামী গৃহস্থালি কাজ করে সেও এখন কোথাও কাজে যেতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল বন্ধ, কাউকে যে ফোন করে খাবারের জন্য বলব তারও কোন ব্যবস্থা নেই। দয়া করে আমার চারটি ছেলেমেয়ের দিকে তাকান, তাদের জন্য ভাতের ব্যবস্থা করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সুলতানপুর এলাকা ফতেহাবাদ দক্ষিণপাড়ার এই রাস্তায় কোথাও বুক সমান কোথাও কোমর সমান পানি। পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে। এছাড়াও বড় বড় গর্ত হয়েছে। নৌকা ছাড়া এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আসা অসম্ভব। তাই অনেকে এখানে ত্রাণ নিয়ে আসতে চান না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে রাতের রান্না করা খাবার এসেছে। পানি না কমা পর্যন্ত।

ফতেহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রহুল বলেন, ফতেহাবাদ ইউনিয়নে ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমি সাধ্যমতো খাবার, ওষুধ ও চাল বিতরণ করছি। ফতেহাবাদ দক্ষিণ এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

No comments

Powered by Blogger.