টিভি সাংবাদিক রাহনুমার রহস্যজনক মৃত্যু
রাহনুমার মৃত্যুর আগে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দু’টি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেই পোস্ট নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মৃত্যুর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের লোকেশন দিয়ে ফাহিম ফয়সাল নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন রাহানুমা। এতে তিনি লিখেন- ‘আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়ে ভালো লাগলো, ঈশ্বর আপনাকে সর্বদা আশীর্বাদ করুন। আশা করি আপনি শিগগিরই আপনার সমস্ত স্বপ্ন পূরণ করবেন, আমি জানি আমরা একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছি। দুঃখিত আমাদের পরিকল্পনা পূরণ করতে পারিনি, ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন।’ এর এক ঘণ্টা আগে আরেকটি স্ট্যাটাসে রাহনুমা লিখেন- ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’ এরপরই রাত দেড়টার দিকে তাকে হাতিরঝিলের পানি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।
রাহনুমারকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা পথচারী মো. সাগর বলেন, আমি হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ঝিলের পানিতে একটি নারী ভাসমান অবস্থায় রয়েছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঢামেকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাহানুমার স্বামী সায়েদ শুভ্র বলেন, ঢাকার কল্যাণপুরের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। রাহনুমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুরে। তার বাবা বখতিয়ার শিকদার নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি। শুভ্র বলেন, প্রেমের সম্পর্ক থেকে সাত বছর আগে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। মঙ্গলবার সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেননি। এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরে আমি তাকে ফোন করলে সে ব্যস্ত আছি বলে ফোন রেখে দেয়। রাত ৩টার দিকে খবর পাই, সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পায়। শুভ্র বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি, তবে বেশ কিছুদিন আগে থেকে আমার স্ত্রী আলাদা হতে চাইছিলেন। আমরা দু’জনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসবো বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।
রাহনুমার বোন রাবিতা সাবাহ্ বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ওর দুলাভাইয়ের ম্যাসেঞ্জারে কল করে রেডক্রিসেন্টের একজন জানায়, রাহনুমা হাতিরঝিলে এক্সসিডেন্ট করেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। ওর স্যালাইন চলছে। পরে আমরা এসে দেখি ও আর নেই। তিনি, আমার বোন চাকরি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিল। কিন্তু আত্মহত্যা করার মতো তেমন কিছুই ছিল না। ওর সঙ্গে যখন শেষ কথা হয় তখনও সে স্বাভাবিক ছিল। আমাদের রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ দেয়া নিয়েও কথা হয়। কিন্তু এমনটা হবে কিছুই বুঝতে পারিনি। রাহনুমার দুলাভাই মীর মোহম্মদ আসিফুল বারী বলেন, আসলে ঠিক কী কারণে ওর মৃত্যু হয়েছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে না কি আত্মহত্যা করেছে সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। আমাদের বিশ্বাস- তদন্তের পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন তাকে হাতিরঝিলে ঝাঁপ দিতে দেখে। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপরও পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। ময়নাতদন্তের জন্যও লাশ ঢামেকের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
No comments