লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দখল নিয়ে বিবাদ

লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাঝে-মধ্যেই সহিংস প্রতিযোগিতা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা আছে। তাতে দেশটির অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় লিবিয়ায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, কূটনৈতিক উপায়েই শুধু এই ব্যাংক নিয়ে সমস্যার সমাধান হতে পারে। জাতিসংঘ সমর্থিত উদ্যোগে সেখানে বিবদমান গ্রুপগুলোকে নিয়ে জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ওই মন্তব্য করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রিচার্ড নরল্যান্ডের নেতৃত্বে দূতাবাস সব পক্ষকে জাতিসংঘের আহ্বানে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিযোগিতার ফলে লিবিয়ার অর্থনৈতিক মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। লিবিয়ার জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খর্ব হচ্ছে।

আর তাতে ক্ষতিকর সংঘাত বৃদ্ধি করছে। দূতাবাস আরও বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মচারীদের খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার এবং ভীতি প্রদর্শন উদ্বেগের। এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে জাতিসংঘ সমর্থিত আবদুল হামিদ দবেইবাহর নেতৃত্বে সরকার আছে। গত ২০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বরখাস্ত করে একজন নতুন গভর্নর নিয়োগ দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি মঙ্গলবার। এই ব্যাংকটি লিবিয়ার অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তারা প্রধান দু’টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিক। তাদের কাছে আছে ২৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ। এর বেশির ভাগই এসেছে তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব হিসেবে। বরখাস্তকৃত গভর্নর সাদিক আল-কবির সম্প্রতি দবেইবাহর অতিরিক্ত ব্যয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে কথা বলা শুরু করেছেন। দেশের পূর্বাঞ্চলে যে শক্তি আছে তিনি তাদের পক্ষে রয়েছেন। ওদিকে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন ডেপুটি গভর্নর হিসেবে আবদেল ফাত্তাহ গাফ্‌ফারকে নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি রাজধানী ত্রিপোলিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বলেছেন, বর্তমানে যে তারল্য সংকট চলছে তার সমাধান করতে পারবেন তিনি। দুইদিনের মধ্যে কর্মচারীদের বকেয়া বেতন দিতে পারবেন। গভর্নর পরিষদের কাছে তিনি জবাবদিহি করবেন। তিনি ব্যাংকটির গোপন কোড হস্তান্তরের জন্য সাদিক আল-কবিরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদি সেটা করা হয়, তাহলে কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে এই ব্যাংকটি পরিচালনা করেছেন কবির। ওই বছরই লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তাতেই দেশটি পশ্চিম ও পূর্ব দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। পূর্বভাগে যে বিরোধী প্রশাসন আছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কবিরকে বরখাস্ত করার বিরোধিতা করেছে। পূর্বাঞ্চলীয় সরকার বলেছে, কবিরকে আবার নিয়োগ না করা পর্যন্ত তারা সব রকম তেল উত্তোলন এবং রপ্তানি বন্ধ অব্যাহত রাখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতা, কর্মকর্তা কর্মচারী, প্রশাসনের ওপর বার বার হামলার জন্য তারা ‘নিষিদ্ধঘোষিত গ্রুপগুলোকে’ দায়ী করেছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাংকটি পরিচালনা করেছেন কবির। কিন্তু মিলিশিয়াদের তরফ থেকে হুমকি থাকায় এবং চারজন স্টাফকে অপহরণ করার কারণে তিনি কাজকর্ম করতে সক্ষম হননি। এর ফলে তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, আগস্ট মাসের বেতন হয়তো পরিশোধ করা যাবে না। যারা এই ব্যাংকটি দখল করার নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা বেআইনিভাবে ই-মেইল পাঠানোকে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যাংক থেকে কোনো মেইল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় কবিরকে বরখাস্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান কূটনীতিকরা, লিবিয়ান প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল। তারা বলেছেন, উদ্বেগের বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছেন। তবে তারা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সততা ও যোগ্যতা অনুযায়ী একজন গভর্নর নিয়োগ হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

No comments

Powered by Blogger.