আমাদের কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই -মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময়ে জামায়াত আমীর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বাধীন মিডিয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ৫৩ বছরের যাত্রাপথে মিডিয়া বার বার বিভিন্ন চাপের মুখে পড়েছে। অদৃশ্য   শক্তি, উপরের চাপ- এই শব্দগুলো আমাদের সমাজে বহুল পরিচিত। যার কারণে খোলা মনে সাংবাদিকরাও এই জাতির জন্য ওয়াচ ডগ হিসেবে তাদের যে মতামত সেটাকে তারা গুরুতরভাবে তুলে ধরতে পারেননি। বার বার বাধা এসেছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানস্থ একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের পক্ষে বক্তব্য রাখেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বাংলাভিশনের প্রধান সম্পাদক ড. আব্দুল হাই সিদ্দিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই সিকদার, মানবজমিনের যুগ্ম সম্পাদক শামীমুল হক, সাবেক ডিইউজে’র নেতা এলাহি নেওয়াজ খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এ ছাড়া সভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও উচ্চতর পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমীর বলেন, অনেক ব্যাপারে কনসার্ন নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। ওই কথাগুলো তারা আমাদের বিভিন্ন সময়ে বলেছে, এই কথাগুলো দুঃখজনক। অথচ সকল সরকারই একটা কথা বলেছে- আমাদের দেশের সাংবাদিকতার জগৎ স্বাধীন। এটা বাহিরে বলা হয়েছে, ভেতরের চিত্র আপনারা আমার থেকে অনেক ভালো জানেন।

এমন একটা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে একটা দেশ এগিয়ে যাবে, সেটি জনগণকে স্বস্তি দেবে এটা অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে করি। তিনি বলেন, আমাদের দলও যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে আমরাও যেন বস্তুনিষ্ঠতা এবং উদারতাকে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পারি। অতীতে অমুক এমন কাজ করেছে, সুযোগ নিয়েছে, এজন্য আমাকেও এটা করতে হবে- এই দর্শনে আমরা বিশ্বাস করি না। এই জায়গাগুলো আমাদের জাতীয়ভাবে গ্রহণ করা উচিত।

সমাজের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জাতীয় স্বার্থে এক। এই জায়গায় আমরা কোনো আপস করবো না। যার বিপক্ষে যাক আর পক্ষে যাক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের জাতীয় স্বার্থ। আমরা যেন সবাই নির্ভয়ে তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশটা আমাদের সবার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এটা সবার দেশ। যখন একদল বলে পাকিস্তানি রাজাকার, একদল বলে হিন্দুস্তানি রাজাকার- খুব কষ্ট হয়। আমার দেশের জনগণকে আমি কেন আরেক দেশের দালাল বানাচ্ছি, রাজাকার বানাচ্ছি? এটা যারা করেন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া উচিত। যে জাতি তার নাগরিককে স্বীকৃতি দেয় না, সেই জাতি বিশ্বের দরবারে সম্মান পাবে কীভাবে?

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সমাজে একটা কথা চালু আছে, সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু। এই শব্দের মাধ্যমে একটা সমাজকে বিভক্ত করা হয়। আমরা এই কনসেপ্টের সঙ্গে একমত না। এই মাইনোরিটি-মেজোরিটির স্লোগান আমাদের দেশে যত ওঠে, দুনিয়ার আর কোনো দেশে ওঠে কিনা আমি জানি না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমরা সকলে যেন সজাগ হই। এবার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের দল, বিএনপি, ছাত্রদলসহ মাদ্রাসার ছাত্ররাও ছিল। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে কাউকে কাউকে পাহারা দিতে হবে কেন? এই সংস্কৃতি উঠে যাক সেটা আমরা চাই। সবাই যেন নিরাপত্তার গ্যারান্টি পায়।

আমরা বিশ্বের সকল শান্তিকামী গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। আমরা সকলের মর্যাদা রক্ষার পক্ষে এবং আমাদের নিজেদের মর্যাদা পাওয়ার পক্ষে। এক দল শুধু দিয়ে যাবে আরেক দল শুধু পেয়ে যাবে, এটা কিন্তু জাস্টিস না। এটা মিউচুয়াল হতে হবে এবং মিউচুয়াল রিলেশন যখন ভালো থাকে তখন সবাই ভালো থাকে।

জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এই মাসের ১ তারিখে আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যে ছাত্র সংগঠনটি আমাদের ভালোবাসে আমরাও তাদের ভালোবাসি, তাদের নিষিদ্ধ করা হলো। কোন প্রেক্ষাপটে? যখন অধিকারের দাবিতে সারা জাতি ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনের ইস্যু ভিন্ন দিকে নিতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, ২৭ দিন আমাদেরকে নিষিদ্ধ করে যে জুলুম করা হয়েছিল সেটি ইতিমধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে।

সকল রাজনৈতিক দলকে জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সাক্ষী রেখে বলছি- রাজনৈতিক দল হিসেবে কারও প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নাই। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। যিনি নির্দিষ্ট ক্রাইম করেছেন, তার ওই নির্দিষ্ট ক্রাইমের শাস্তি যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে সমাজের সংশোধন হবে না। তখন পাবলিক বেপরোয়া হয়ে যাবে। এজন্য এটা ন্যয্যতার দাবি, ন্যায় বিচারের দাবি, সামাজিকতার দাবি, শান্তির দাবি। তিনি বলেন, সেই ক্ষেত্রে ভিকটিমরা যদি সঙ্গত উদ্যোগ নেয়, সেই উদ্যোগে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সকলকে সাপোর্ট করা হবে। কিন্তু তারা অসৎ পথে কিছু করলে তাদের সঙ্গে আমরা নেই। একটা হত্যা মামলায় ৫০০ জনকে আসামি করা হচ্ছে, এটা কতোটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে আমাদের সকলের চিন্তা করা উচিত। এতে মূল ব্যক্তির বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সংগঠকদের বলেছি- আমরা সবার চাইতে মজলুম বেশি, সিম্বোলিক কিছু মামলাই মানুষের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট। সেই মামলায় একজনও নিরপরাধ মানুষ যাতে অভিযুক্ত না হয় সেই ব্যাপারে শতভাগ আমাদের নিশ্চিত হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.