শ্যালা নদীতে আবারও নৌ চলাচলের অনুমতি

সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে আবারও নৌযান চলাচলের অনুমতি দিল সরকার। তবে আপাতত কোনো তেলবাহী ট্যাঙ্কার চলাচল করতে পারবে না। নিয়ন্ত্রিত উপায়ে কাল বুধবার সকাল থেকে শুধু দিনের বেলা নৌযান চলাচল করতে পারবে। গত ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেলসহ একটি ট্যাঙ্কারডুবির ২৮ দিনের মাথায় সরকার এই অনুমতি দিল। তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার ওই পথটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এর আগে ২০১১ সালের এপ্রিলে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শ্যালা নদীতে একটি নৌপথ চালু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিইউটিএ)। গত এক বছরে এই পথে মোট তিনটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বরের দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে বলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের প্রাণীদের খাদ্যচক্র ভেঙে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। নৌ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নৌ পরিবহনসচিব শফিক আলম মেহেদী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজিবুর রহমান প্রমুখ।  ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌযানগুলোর দিনের বেলায় সুন্দরবন এলাকা (বিশেষ করে শ্যালা নদী) অতিক্রম করতে হবে। কুয়াশা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিনের বেলায়ও শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর জাতিসংঘ, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুন্দরবন দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল এখনো তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেনি। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খননকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বুধবার সকাল থেকে শ্যালা নদী দিয়ে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সাময়িকভাবে নৌযান চলাচল করতে পারবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খননকাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। সুন্দরবন এলাকায় শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। কোস্টগার্ডকে সহায়তা করবে বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, উল্লিখিত পথে চলাচলকারী জাহাজের ফিটনেস সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের সহায়তায় কোস্টগার্ড চেক করতে পারবে। সাগরে চলাচল করতে সক্ষম জাহাজ সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.