পথে পথে দুর্ভোগ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের পূর্বঘোষিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশদ্বার গাবতলীর অবস্থা সকাল থেকেই ছিল থমথমে। সোমবার রাজধানীতে ২০ দলের নেতাকর্র্মীদের প্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ। বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকে গাবতলী এলাকায় দেখা যায়নি। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাবতলী ও আশপাশের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন। গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্টে  পুলিশের বিরুদ্ধে চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাত থেকেই চেকপোস্ট বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। সোমবার ভোর ৬টা থেকে দারুস সালাম থানার এসআই টিটুর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গাবতলী ব্রিজের মুখে অবস্থান নেয়। ওই অংশ দিয়ে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সিএনজি ও প্রাইভেট কারের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। কোন  পরিবহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেন। বাধা সত্ত্বেও ব্রিজ পার হতে যারা চেষ্টা করেছেন তাদের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরজমিনে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে একটি পালসার মোটরসাইকেল আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই আরোহী জরুরি প্রয়োজনে পান্থপথে যাওয়ার কথা জানালে পুলিশ তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। এসআই টিটুর হাতে ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে মোটরসাইকেলসহ পার হয়ে যায় ওই দুই আরোহী। আরেকটি মোটরসাইকেল আটকে তাকে ২০০ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওই মোটরসাইকেল আরোহী নিজেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে জানান, আমিনবাজারে ভূমি অফিসে জরুরি কাজ শেষ করে ফিরছিলেন তিনি। ব্যাগে থাকা কাগজ দেখিয়েও পার পাননি তিনি। টাকা না দিলে মোটরসাইকেল আটকে রাখা হবে বলে হুমকি দেন এসআই টিটু। অবশেষে টাকা দিয়ে মুক্তি পান ওই আরোহী। মামুন নামে এক ইট ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, আমিনবাজারে ইটভাটা থেকে ফিরছিলেন তিনি। পথে গাবতলী ব্রিজে তাকে পুুলিশ আটকে দেয়। পরে ৪ লিটার কোল্ড ড্রিংকসের বিনিময়ে ছাড়া পান তিনি। দারুস সালাম এলাকায়ও পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে রিকশা ও সিএনজি আটকে টাকা নিতে দেখা যায়। এ সময় এক রিকশাচালকের মানিব্যাগে থাকা ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্যকে। ওই পুলিশ সদস্যের বুকে নেমপ্লেট না থাকায় তার নাম জানা যায়নি। এদিকে রোববার সন্ধ্যার পর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। সোমবার সকাল হতে গাবতলী থেকে কোন লোকাল সার্ভিসও ছেড়ে যায়নি। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স  অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র মো. সালাহউদ্দিন জানান, পরিবহন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার চাপ ছিল না। নাশকতার আশঙ্কায় পরিবহন মালিকরাই গাড়ি ছাড়তে রাজি হননি। ঢাকায় কোন প্রবেশ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, দূরপাল্লার গাড়িগুলো মাঝপথেই ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবহন সমিতির নেতারা। যে কারণে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। গণপরিবহন না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা করে মানুষ নিজ নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। বেসরকারি চাকরিজীবী রাহেমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোন ধরনের হরতাল-অবরোধ নেই। অথচ পুলিশ গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। সাভার থেকে গাবতলী আসতে তাকে ৫ বার সিএনজি অটোরিকশা বদল করতে হয়েছে বলে জানান তিনি। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা সত্ত্বেও গাবতলী এলাকায় ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের জন্য সকাল থেকেই প্যান্ডেল বানিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক লীগের দারুস সালাম থানার সভাপতিকে জাকারিয়ার নেতৃত্বে  অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় বাংলা কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম মাসুম ও শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আকতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। মাজার রোড এলাকায় ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক এমপির নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, যুবলীগের আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান রাসেলসহ প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নেয়। কর্মসূচি উপলক্ষে মাজার রোডে লাল মিয়ার মাজার শরীফে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। টেকনিক্যাল মোড়ে সকাল থেকেই অবস্থান করে মিরপুরের বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম জাহিদ মামুন ও সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান অনিকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সড়কের মাঝখানে বসে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.