চট্টগ্রামে সোনা ছিনতাই- এক কোটি টাকা নিতে চেয়েছিল পুলিশ by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে ১৮টি সোনার বার বিক্রি করে ভাগ হিসেবে এক কোটি টাকা নিতে চেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবুল হোসেন। এই ব্যাপারে ছিনতাই করার আগে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ ছিনতাইকারীর সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছিল সে।  বেশ কয়েকদিন ধরে খোঁজ খবর করছিল চোরাকারবারিদের। ধরা পড়ার ভয়ে ভেবেছিল দুই চোরাচালানি সিন্ডিকেট বিষয়টি চেপে যাবে। কিন্তু ঘটনা ফাঁস হলে প্রথমে সে অস্বীকার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে। চট্টগ্রামে গত শনিবার ছিনতাই হওয়া সোনা উদ্ধারের ঘটনায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনায় বর্তমানে ডিবির এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে কয়েক দফা রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে থানা কার্যালয়ে এসআই আবুল হোসেন জানান, তিনি সোনার বার ছিনতাই করার  জন্য স্থানীয় হকার তারেক, লোকমান, বাপ্পি, জসিম ও কবির নামের ৫ ব্যক্তির সহযোগিতা চান। এরা হকার হলেও নানা ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত। গত ৫ দিন ধরে এ ছিনতাইকারীরা  সোনার কারবারি সজল চৌধুরী ও নারায়ন কর্মকার এর গতিবিধির দিকে নজর রাখছিল। মূলত এই দুই ব্যক্তি মধ্যপ্রাচ্য থেকে চোরাইপথে সোনা এনে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করে। খবরটি চাউর হলে এসআই আবুল হোসেন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হওয়ার কথা জানায়। এই সময় তাদের সঙ্গে টাকা পয়সার ভাগবাটোয়ারা হয়।
ঘটনার দিন কৌশলে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় গণি হোটেলের সামনে থেকে এসআই আবুল হোসেন সোনার বারগুলো ছিনিয়ে নেয়। পরে দুই চোরাকারবারি সিদ্ধান্ত নেয়, ধরা যখন পড়ে গেছে তখন ঘটনাটি ফাঁস করে দেবে। এরপর তারা পুলিশের সিনিয়র এককর্মকর্তার কাছে বিষয়টি স্বীকার করে। এই সময় ওই দুইজন জানায়, মূলত ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা সোনাগুলো নিয়ে যাচ্ছিল।
ঘটনার দিন ছিনতাইকারী তারেক তাদেরকে দলবল নিয়ে ধাওয়া করে। এই সময় তারা আবুল হোসেনের কাছে সাহায্য চাইলে সে বলে, এতো সোনা নিয়ে তোরা কোথায় যাচ্ছিস। তোদের দেখি বহু টাকা। এই কথা বলে সে তাদের গণি হোটেলের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই সোনাগুলো ছিনিয়ে নেয়। তবে এই ঘটনায় কৃষ্ণ কর্মকার নামের আরও এক চোরাকারবারি রয়েছে। যিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আটক হওয়ার পর থানা হাজতে এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পুলিশের এসআই আবুল হোসেনকে। সে জানায়, সোনা ছিনতাইয়ের আগে সে জানতে পারে ওই দুই কারবারি গোধূলি ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। এরপর স্টেশন রোডে আসতেই আবুল  হোসেন পালিয়ে যাওয়া কৃষ্ণ কর্মকারকে কিলঘুষি  লাথি মারতে থাকে।
এই সময় সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তি পালিয়ে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এএসআই সন্তোষ, কনস্টেবল খোরশেদ, রামপ্রসাদ, আলমগীর ও কাদের নামের ৪ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে এসআই সন্তোষও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। আর  ঘটনার পর আবুল হোসেনের ড্রয়ার থেকে ১৮টি সোনার বার একটি পেকেটে রাবার বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, এসআই আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে  নেয়া হতে পারে আজ (গতকাল)। তার সঙ্গে ছিনতাইকারীদের যোগসাজশ থাকার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। তাকে আসলে লোভে ধরেছিল।
তিনি আরও বলেন, আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা করা হয়েছে। তাকে ধরা পড়ার পর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে বলেছে এই ঘটনার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। যে ব্যবসায়ীর  সোনা মেরে দিতে চেয়েছিল তারাও চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.