সরকারের আচরণে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ by হায়দার আকবর খান রনো

২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল- গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশ এতটুকুও এগোতে পারল না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এলো, তারা গত এক বছরেও গণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হল গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। গণতন্ত্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সম্প্রচার নীতিমালা। জনৈক মন্ত্রী বেসামাল অবস্থায় সত্য কথাটি বলে ফেলেছিলেন, সম্প্রচার নীতি পাস হোক, খবিশ সাংবাদিকদের দেখে নেব।
বিচার বিভাগকেও সংসদের অধীনস্ত করার প্রস্তুতি চলছে। গুম, খুন ও পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবশেষে আজকের রাজনৈতিক ঘটনাবলি প্রমাণ করে, গণতন্ত্রের অবশিষ্টটুকুও নেই। শাসক দল ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনকে জোরগলায় বলছে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের বিদায় দিবস কোনটি?
বিএনপি এ দিনটিকে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস বলে আখ্যায়িত করেছে। বিএনপি অবশ্য গত এক বছরে অনেক আস্ফালন করলেও কোনো বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও গণতান্ত্রিক দল নয়। জনগণ তাদের শাসনামলও দেখেছে। মনে পড়ে, তাদের শাসনামলে ক্লিন হার্ট অপারেশনে বহু নিরীহ মানুষকে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছিল। অনেকে নিহত হয়েছিলেন। সংসদে আইন পাস করে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষ তাদের জন্য জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নামবে কেন?
উপরন্তু বিএনপি যেভাবে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ঘর করছে, তাতে তাদের প্রতি আমারও কোনো সহানুভূতি নেই। কিন্তু প্রশ্ন সেটা নয়। আজ যখন খালেদা জিয়াকে ঘরে তালাবদ্ধ করে আটক রাখা হয়, বালুর ট্রাক দিয়ে অভিনব অপকৌশলে বন্দি রাখা হয়; অথচ বলা হয়, তাকে নিরাপত্তার খাতিরে নাকি এসব করা হচ্ছে- তখন আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন মিথ্যাচার দেখে স্তম্ভিত হই। সরকারের এ আচরণ তো ফ্যাসিবাদেরই লক্ষণ। ফ্যাসিবাদ একবার চেপে বসলে সাধারণ মানুষই তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দুই পক্ষের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি অবসানের লক্ষ্যে সব কার্যকরী রাজনৈতিক দল এবং সমাজের চিন্তাশীল মানুষকে একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সমঝোতার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক আচরণের বিধিমালা তৈরি করে তা মেনে চলার অঙ্গীকার করতে হবে।
সবশেষে জনগণের ওপরই আমাদের আস্থা রাখতে হবে।
হায়দার আকবর খান রনো : রাজনীতিক; বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য

No comments

Powered by Blogger.