প্রেস ক্লাবে মির্জা ফখরুল অবরুদ্ধ, পুলিশে দেয়ার আহবান হানিফের, ভেতরে ঢোকার চেষ্টা প্রজন্ম লীগের

(প্রেসক্লাবে দিনভর উত্তেজনা- মির্জা ফখরুল ক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছেন) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবস্থানকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ প্রেস ক্লাবের চারদিক অবরোধ করে রেখেছে। প্রেস ক্লাবের তিনটি গেটই ঘিরে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রয়েছে পুলিশের জলকামান, এপিসি। এ ছাড়া মঙ্গলবার সকালে প্রেস ক্লাবের আশপাশের রাস্তার গলির মুখেও পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। প্রেস ক্লাবে প্রবেশকারী প্রায় সবার দেহ তল্লাশী করা হচ্ছে। জানা গেছে, গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেশাজীবীদের সমাবেশে যোগ দেয়ার পর প্রেস ক্লাবেই অবস্থান করেছেন। রাতে তিনি প্রেস ক্লাব থেকে আর বের হননি। প্রেস ক্লাব এলাকায় গুজব রয়েছে, মির্জা ফখরুল যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। ফখরুলের সাথে প্রেস ক্লাবে অবস্থান করছেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সম্মিলিত পেশাজীবীর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ। কিছুক্ষণের মধ্যে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, প্রেস ক্লাবে যেকোনো প্রকার নাশকতা ঠেকাতে আমাদের এই অবস্থান। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আগাম কিছুই বলার নেই।
ফখরুলকে পুলিশে দেয়ার আহবান হানিফের
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফেরারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আখ্যায়িত করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে মহানগর আওয়ামী লীগের জমায়েতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রেস কাব সাংবাদিকদের জায়গা। সেখানে একজন ফেরারী, ওয়ান্টেড আসামি কেন লুকিয়ে থাকবে? প্রেস কাব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব, এই আসামিকে পুলিশের হাতে তুলে দিন।
হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া কর্মসূচি দিয়েছিলেন। তার কর্মসূচিতে তার দলের নেতা-কর্মীরাই মাঠে নামেনি। এই ক্ষোভে তার নির্দেশে তার দলের সন্ত্রাসীরা গাড়ি পুড়িয়েছে। এভাবে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় খালেদা জিয়া আবার অবরোধ ডেকেছেন। কিসের অবরোধ? কোথায় অবরোধ হচ্ছে? দেশের জনগণ ঘৃণাভরে এই অবরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। এ জন্যই অবরোধ ডেকেছেন। জনগণ যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের অবরোধ মানে না। বিশ্ব ইজতেমার মধ্যে বিএনপির অবরোধ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, সরকার নির্বিঘেœ ইজতেমা পালনের জন্য যা যা করা দরকার, তাই করবে। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা প্রজন্ম লীগের
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। দলের শতাধিক নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের ফটকে ধাক্কা দিচ্ছেন। ভেতরে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বের করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাবের ভেতরে রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ল​ীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, মির্জা ফখরুলকে প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বের করে দিতে হবে। ফটকে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকে এ সময় নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। সকালে জানানো হয়, মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বাইরে আসেননি। প্রেসক্লাবের সামনে অসংখ্য পুলিশ রয়েছে। জানা গেছে, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদের ঘরে রয়েছেন মির্জা ফখরুল। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে রাজপথের কর্মসূচি গতকাল ঢুকে পড়েছিল জাতীয় প্রেসক্লাবে। প্রায় দিনভর সেখানে সরকার-সমর্থক ও বিরোধীদের বিভিন্ন কর্মসূচি, উত্তেজনা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। বেলা আড়াইটার দিকে অনেকটা আকস্মিকভাবে প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ক্লাবের ভেতরই অবস্থান করছেন। দলীয় সূত্র জানায়, রাতের বেলায় তিনি গ্রেপ্তার হতে চান না। আজ মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাবের ভেতরেই তিনি অপেক্ষা করছেন।

No comments

Powered by Blogger.