প্রতিবাদ না ভুলে থাকা! by রুম্পা ফারজানা জামান

দামিনী নামের তারুণ্য ভরা মেয়েটি অসময়ে চলে গেল কতগুলো নরপশুর কারণে। ঘটনাটা সবার জানা। তারপরও ছোট্ট করে বলে নেই। গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাসে করে বাড়ি ফেরত আসার সময় বাসচালক এবং তার পাঁচ সহযোগী ধর্ষক মিলে দামিনী নামের মেয়েটিকে বীভৎসভাবে আক্রমণ করে।
সঙ্গে থাকা বন্ধুটিকেও মারতে থাকে। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর বন্ধুসহ চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ভারতে চিকিৎসার পর যখন মেয়েটির অবস্থার অবনতি ঘটে তখন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে তাকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শারীরিক এবং মানসিকভাবে আঘাতের শিকার হওয়ার কারণে মেয়েটি অবশেষে ২৯ ডিসেম্বর ভোরে মারা যায়।
দামিনী নামের মেয়েটির কেসটিকে ভারত সরকার আমানত নাম দিয়েছিল। আবার অনেকে তাকে ভারতকন্যা/ভারত সাহসিকা ইত্যাদি নাম দিয়েছে। নাম যাই হোক, দামিনীর হত্যাকাণ্ড পুরো ভারতের তরুণ সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মানালি_ সর্বস্তরের সব রাজ্যের সাধারণ মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়। প্রতিবাদের ব্যানার হাতে উঠে এসেছে পাড়ার সবচেয়ে লাজুক মেয়েটির হাতেও।
আমার প্রশ্ন_ দামিনী আজ আমাদের পত্রিকার প্রথম পাতায়, তার ফাঁসি চাচ্ছে ফেসবুকের স্টেটাসধারীরা। আমাদের সাজিয়া আরেফিনকে কি তারা চেনেন? সাজিয়া সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে চাকরি শুরু করেন ব্র্যাকের আঞ্চলিক শাখায়। একদিন রাতে মেয়েটির ঘরে কড়া নাড়ে তারই পরিচিত এক অফিস স্টাফ। দরজা খুলতেই মেয়েটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। কোনো কারণবশত ব্যর্থ হলে সেই অফিস স্টাফ সাজিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
ভারতের দামিনী আর আমাদের সাজিয়া দু'জনেই ডাক্তার। দু'জনেই তরুণী। দু'জনই সাহসী_ কারণ তারা ক্রমশই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। দু'জনই বিকৃত মানসিকতার লালসার শিকার। এবার পার্থক্য। আজ দামিনী পরিণত হয়েছে ভারতের প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে, আর সাজিয়ার কথা আমরা ভুলে বসে আছি। কেন একটি ডাক্তার মেয়ে তার কর্মস্থলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে? কেন কর্মস্থলে কেউ নিরাপদ নয়? কেন কেউ নিরাপদ নয় রাস্তায়, বাসায় এমনকি শিক্ষালয়েও? আজকে দামিনীর মৃত্যুতে আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি, ওর বন্ধুটির কিছু হলেও আমি কষ্ট পাব। সাজিয়ার মৃত্যুতে যেমন আতঙ্কিত হয়েছি_ বিশ্বজিতের মৃত্যুতে একইভাবে হৃদয় ভেঙেছে আমার। দামিনীর মৃত্যুর পর থেকে নানা ধরনের ভেদাভেদে ব্যস্ত এ দেশের সুশীল সমাজ। যেহেতু এ দেশের সুশীল সমাজ সবকিছুতে ধর্ম ক্যাচায় ফেলে_ কেউ কেউ হিজাব নিয়ে শুরু করল। যদিও হিজাবের সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। তথ্য মতে, অধিকাংশ নারী স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয়_ সে ক্ষেত্রে হিজাবের ভূমিকা কী আমি জানি না। অন্যের দিকে তাকিয়ে হাপিত্যেশ না করে দেখুন নিজের সাহস আছে কি-না। যদি নিজেদের সাহস না থাকে সাজিয়ারা এভাবেই মারা যাবে আর আমরা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকব অন্য দেশের দিকে।
য়ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.