শত পাহাড়ের পাদদেশে জোড়া লেক ছায়াঘেরা বন by মাকসুদ আহম

চট্টগ্রাম অফিস জোড়া লেক ! খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক হলেও ভাটিয়ারীতেই রয়েছে সুদৃশ্য রাসত্মার দু'ধারে জোড়া লেকের অবস্থান।ছায়াঘেরা বন আর পাহাড়ের মাঝে লেকের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া দায়।
পর্যটকরা সব সময় অজানাকে জানতে ছুটে যায় দেশদেশানত্মরে। যেখানে লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। যেখানে পাহাড়ের অবস্থান সেখানে লেক গড়ে ওঠা অনেকটা স্বাভাবিক। উঁচু নিচু টিলা আর সমতল অতিক্রম করে ধীরে ধীরে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মসৃণ সড়ক। কিছুদূর পার হলেই চট্টগ্রামের হাটহাজারীমুখী এ সড়কের উভয় দিকে তাকালেই নজরে পড়বে সুদৃশ্য জোড়া লেক। পর্যটন স্পট হিসেবে নগরীর অনতিদূরে এ দুটি লেক হাতছানি দিয়ে পর্যটকদের ডাকছে। লেকের ধারে বসে অনেকে বড়শির ছিপ ফেলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে মাছের অপোয়।
এটিকে অনেকে ভাটিয়ারী লেক আবার অনেকে গলফ কাব এলাকা বলেও পরিচয় দেয়। সমতল থেকে অনেক ওপরে এ লেকের অবস্থান। অনেক পাহাড়ের পাদদেশে জমে থাকা পানি থেকেই এখানে লেকের উৎপত্তি হয়েছে। ততটা চওড়া না হলেও লেক দুটি অনেকটা সাপের লেজের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে অনেক দূর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই স্থানীয়রা ছাড়াও দূর দূরানত্ম থেকে অনেক পর্যটক ভিড় জমায় সুদৃশ্য এ লেকের ধারে।
নগরী থেকে মাত্র ১৫ কিমি. দূরে ভাটিয়ারীতে রয়েছে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর গলফ্ কাব সংলগ্ন এ জোড়া লেক। সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে এ লেকের অবস্থান। তবে ভাটিয়ারী মিলিটারি একাডেমী সংলগ্ন এলাকায় এর অবস্থান হওয়ায় যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র দু'কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আবার কোথাওবা পাহাড়ের তুঁলির ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য সড়ক। নখের পিঠের মতো মসৃণ রাসত্মা একেবেঁকে গেছে প্রায় ২০ কিলোমিটার। মহাসড়কের ভাটিয়ারী থেকে হাটহাজারী পর্যনত্ম এর বিসত্মৃতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরও একটি অহঙ্কার রয়েছে এ স্থানটিকে ঘিরে।
লেকের পানিতে নামার সুযোগ অনেকটা কম। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ স্পীডবোটের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকটি স্পটে সিঁড়ি পাতানো রয়েছে পর্যটকদের নামার সুবিধায়। নির্জন এ সড়কে যানমালের নিরাপত্তা অনেকটা কম হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা সকালে জমে উঠে না। তবে বিকেলকে কেন্দ্র করে বিলাসবহুল গাড়ির বহর আর বিনোদনপ্রিয় পর্যটকদের অবস্থান এ এলাকাকে রাঙিয়ে তোলে।
প্রতিদিন শত শত পর্যটক মনের আকুতি জানাতে এবং নিজেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ছুটে আসে এখানে। তবে বন্ধের দিন শুক্র ও শনিবার সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাবেশ ঘটে। তবে টিনেজরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে ভর দুপুরেও আড্ডা দেয় এই এলাকায়। পছন্দের মানুষটিকে কেইবা না পেতে চায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতে। শুধু লেকই নয়, পুরো চট্টগ্রাম শহরের অনেকাংশ অবলোকন করা যায় এ স্থান থেকে। অদূরে দৃশ্যমান বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ আর বহির্নোঙ্গরে দাঁড়িয়ে থাকা শত জাহাজের মিছিল।
চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। এরই মাঝে চাঁদের কপালে টিপের মতো এ লেক দুটি । সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আওতাধীনে এ লেকে পরিচালিত হচ্ছে স্পীডবোট। এ স্পীডবোটে চড়ে সর্বোচ্চ ১২ জন পর্যটক সম্পূর্ণ লেক পরিদর্শন করতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার এ লেকে ৬শ' ও ৮শ' টাকায় মৎস্য শিকারিরা বড়শিতে মাছ ধরতে পারে। দৃষ্টিনন্দিত লেক আর সবুজেঘেরা পাহাড় ছাড়াও রয়েছে সূর্যোদয় ও সূর্যাসত্মের অবলোকনের একটি স্থান। প্রাকৃতিক দৃশ্যপ্রেমীদের ভিড়ে জমে উঠে পুরো এলাকা। বিশেষ করে সরকারী ছুটির দিনগুলোতেও থাকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।

No comments

Powered by Blogger.