বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী-২০৩০ সালের মধ্যে উন্নত দেশভুক্ত হবে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করতে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মান বাড়ানো এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বর্তমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ৩০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল শনিবার মাসব্যাপী ১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, �বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, অন্যদিকে অপার সুযোগও এনে দিয়েছে। তাই বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির নতুন নতুন কৌশল নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।�
বিদেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাতে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ পায়, সে জন্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
এক হাজার ৮৫০ কোটি আমেরিকান ডলার। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের পাঁচ মাসে ৮২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের এ সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংক সুদের হার ১৬-১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে ১২-১৩ ভাগ করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ৩০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিতে পারবে।
বিশ্ব মন্দা মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানিমূলক খাতগুলোকে প্রথম প্যাকেজের আওতায় তিন হাজার ৪২৪ কোটি টাকার প্রণোদনা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ছিল স্থিতিশীল। গত বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের জীবনের মান উন্নত করা। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সরকার নিজে কোনো ব্যবসা করবে না। বেসরকারি খাত ব্যবসা করবে। সরকার শুধু তাদের সহায়তা প্রদান করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা অতি দ্রুততার সঙ্গে নিরসন করার জন্য তিনি প্রতিশ্র�তি দেন। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা খেয়াল রাখবেন, যাতে শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নত হয়।
দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটের জন্য বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, জোট সরকারের পাঁচ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে জাতীয় গ্রিডে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও নতুন করে সংযোজিত হয়নি। অথচ চাহিদা বেড়েছে অনেক। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে। আরো ১০টি কেন্দ্রের নির্মাণ কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর আরো দুই হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এর ফলে নতুন নতুন কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। দেশের শিল্পায়নের গতি বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, �নিয়মিত এ ধরনের মেলার আয়োজন নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, পণ্যের মানোন্নয়ন, বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য নতুন নতুন আমদানিকারকদের আকৃষ্ট করতে পারলে একদিকে যেমন আমাদের রপ্তানি বাড়বে, অন্যদিকে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করবে। এই বাণিজ্য মেলার রপ্তানি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।�
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
পরে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মেলার স্টলে যান এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি �বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ� নামে একটি স্টলের উদ্বোধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.