বিনামূল্যে ঠোঁট কাটা রোগীর চিকিৎসা চলবে শুক্রবার পর্যনত্ম- ৪০ সফল অস্ত্রোপচার

নিখিল মানখিন ঠোঁট কাটা রোগী হওয়ায় গোপালের সঙ্গী মেলে না পাড়ায়। লোকলজ্জায় সে যেতে পারে না স্কুলে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে থাকে সে। বিষয়টি নজরে পড়লেও ৯ বছর বয়সেও গোপালের চিকিৎসা করাতে পারিনি আমরা।
বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও টাকার অভাবে হয়ে ওঠেনি। বিনা টাকায় আজ তার চিকিৎসা হওয়াতে আমরা খুবই খুশি। যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ছেলেকে আমরা লেখাপড়া করাব। মঙ্গলবার বিনা টাকায় গোপালের কাটা ঠোঁট অপারেশন হওয়ার পর এমন অনুভূতি প্রকাশ করেন তার দরিদ্র মাতা-পিতা জ্যোৎস্না ও সনত্মোষ চন্দ্র দাস। মঙ্গলবার পর্যনত্ম শিশু গোপালের মতো আরও ৪০ জনের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। অপারেশন তালিকায় রয়েছে আরও শতাধিক রোগী। বিনামূল্যে সব ধরনের ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা রোগীদের অপারেশন চলবে আগামী শুক্রবার পর্যনত্ম। গত রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হেলথ ক্যাম্প শুরম্ন হয়। বিএসএমএমইউ এবং অপারেশন স্মাইল বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এই হেলথ ক্যাম্পটি পরিচালিত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্নক_সি এর ১১তলা। এখানে অপারেশন চলছে তালিকাভুক্ত ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা রোগীদের। ২৩ জন দ ও প্রশিতি বিদেশী সার্জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম সব ক'টি অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। সোমবার অপারেশন করা হয়েছে ১৭ রোগীকে। মঙ্গলবার ২৩ রোগীকে অপারেশন করা হয়। ঠোঁট কাটা অপারেশনের অপোয় ৪৯ নম্বর সিরিয়াল নিয়ে বসে আছেন ২৫ বছর বয়সী নওশাদ। মিরপুর-১১ এর বসত্মিতে থাকেন তিনি। স্ত্রী নাসরিন তাঁর সঙ্গে রয়েছে। স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না তিনি। স্ত্রী নাসরিন জনকণ্ঠকে জানান, ঠোঁট কাটার কারণে আমার স্বামীকে সহজে কাজ দিতে চায় না কেউ। আমাদের সংসারে একটি শিশু সনত্মান রয়েছে। স্বামী কাজ না করলে অনাহারে থাকতে হয় আমাদের। টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারিনি। একবার চিকিৎসা করাতে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় স্বামীর চিকিৎসা হয়নি। ব্র্যাকের কমর্ীদের মাধ্যমে এখানে বিনা টাকায় চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছি বলে জানান নওশাদের স্ত্রী নাসরিন। নওশাদের মতো অপারেশনের অপোয় রয়েছে আরও অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের অধীনে বস্ন_সি এর ওয়ার্ড ২/সি এবং বস্নক-ডি এর ১১ তলায় রোগ নিরূপণের পর রোগীদের অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যনত্ম অপারেশন কার্যক্রম চলবে। বস্নক-ডি এর ১১ তলার ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে অপারেশন রোগীদের। সেখানেই কথা হয় শিশু গোপালের মাতা-পিতার সঙ্গে।
মেরম্নল বাড্ডায় থাকেন তাঁরা। পিতা সনত্মোষ চন্দ্র দাস জনকণ্ঠকে বলেন, সামান্য সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাই। সনত্মানের চিকিৎসা করাতে ৩ বছর আগে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছিলাম। ঢাকা মেডিক্যাল ও জাপানি বিশেষ টিম যৌথ উদ্যোগে বিনা টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় এবং বিভিন্ন পরীার জন্য টাকা দাবি করাতে সনত্মানকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বিনা টাকায় চলমান অপারেশন কার্যক্রমে সনত্মোষ প্রকাশ করেন তিনি। শুধু সনত্মোষ চন্দ্র দাস নন, চিকিৎসা নিতে আসা অন্য সব রোগী ও অভিভাবকরাও সেবাকার্যক্রমের প্রতি সনত্মোষ প্রকাশ করেন।
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রচার পাওয়া নয়, দরিদ্র রোগীদের সেবা দেয়ার মনোভাব থেকেই এ ধরনের উদ্যোগ। অধ্যাপক শফিকুল হক বলেন, প্রতিবছর এ ধরনের জন্মগত সমস্যা নিয়ে অনেক শিশু জন্ম নেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। আর্থিক অসামর্থ্যের পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে অজ্ঞ থাকায় অনেক রোগীর চিকিৎসা হয় না। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে কিছুটা হলেও এমন সমস্যার সমাধান হবে। অপারেশন স্মাইল বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ডা. মারম্নফ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, বাছাই কাজ সম্পন্নের পর সোমবার থেকে শুরম্ন হয়েছে অপারেশন কার্যক্রম। চিকিৎসা কার্যক্রমে সফলতা আসছে। ইতোমধ্যে সোমবার ১৭ জন এবং মঙ্গলবার ২৩ রোগীর সফল অপারেশন হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.