সক্রিয় হচ্ছে জামায়াত বিএনপিসহ চারদলীয় জোট- নেতারা আশা করছে ভারতবিরোধিতা তাদের ঐক্যবদ্ধ করবে by রাসেল রানা

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আবার সক্রিয় হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনপরবর্তী প্রায় এক বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর ভারতবিরোধী অবস্থান শক্তিশালী করতেই জোটের শরিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে।
জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশ ও দেশের জনগণকে রৰা করতে চারদলীয় জোটকে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করতে হবে। এজন্য চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করার বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও চার দল জোটগতভাবেই অংশ নেবে এবং নির্বাচনে জিতলে জোটগতভাবেই সরকার গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
জোট সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াত ইসলামী, ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাসের দোলাচলে দূরত্ব বাড়তে থাকে শরিক দলগুলোর মধ্যে। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য জামায়াতকে দায়ী করেন। আবার জামায়াত এ দায় অস্বীকার করে নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি ও লুটপাটকে দায়ী করেন। জোটের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমে সামনে আনেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। নির্বাচনের কয়েক মাস পর ফরিদপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, চারদলীয় জোট বর্তমানে নিষ্ক্রিয় আছে। জোট হিসেবে শরিক দলগুলোর মধ্যে যে যোগাযোগ বা সমন্বয় থাকার কথা তা এখন নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং এই সফরে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারককে কেন্দ্র করে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা জোটের সক্রিয়তার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন। মূলত জোটভুক্ত দলগুলো আদর্শিকভাবেই ভারতবিরোধী হওয়ায় পারস্পরিক সব সন্দেহ- অবিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলে শরিক দলগুলোর পরস্পর কাছাকাছি আসতে বা একত্রিত হতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলেই মনে করছেন জোটের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার দিন ১৩ জানুয়ারি রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিএনপি-জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সরকারকে মোকাবেলায় চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনকে। পরে ঐ রাতেই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন । স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করার বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং জোটকে সক্রিয় করতে শরিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করতে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
রবিবার জোটের শরিক দল বিজেপির জাতীয় কাউন্সিলে জোটপ্রধান বিএনপি চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা দেশবিরোধী। এসব দেশবিরোধী চুক্তির বিরম্নদ্ধে আমরা অবশ্যই আন্দোলন করব এবং তা জোটগতভাবেই। এজন্য জোটকে শক্তিশালী করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করে বিজেপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আন্দোলন সফল করতে হলে জোটভুক্ত প্রত্যেকটি দলকে সংগঠিত করতে হবে। আন্দোলনের যে কোনো কর্মসূচী দেয়া হলে তা ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করতে তিনি বিজেপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সাংবিধানিকভাবে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল, দেশী- বিদেশী ষড়যন্ত্রে তা বাতিল হয়েছে। এই নির্বাচন বাতিল না হলে আবারও চারদলীয় জোটই ৰমতায় আসত উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আরেক পৰ মহাজোট গঠন করেও দেখে যে চারদলীয় জোটই ৰমতায় আসবে। চারদলীয় জোটকে ৰমতায় আসা ঠেকাতেই ওয়ান-ইলেভেনের জন্ম দেয়া হয়। তিনি বলেন, সরকার যেভাবে দেশবিরোধী কর্মকা- শুরম্ন করেছে তা যদি দেশের জনগণ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বোঝানো যায় তাহলে নতুন প্রজন্ম আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে চারদলীয় জোটকেই ভোট দেবে। সেৰেত্রে আগামীতে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে দেশ ও দেশের জনগণ নিরাপদ নয়। একমাত্র চারদলীয় জোটের হাতেই বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ নিরাপদ। জোটের আরেক শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশবিরোধী কর্মকা-ের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে। এর বিরম্নদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রম্নখে দাঁড়াতে হবে। এজন্য চারদলীয় জোটভুক্ত দলগুলোকে সংগঠিত করার পাশাপাশি জোটকে শক্তিশালী করতে হবে, সক্রিয় করতে হবে। জোটভুক্ত আরেক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের নামে ইসলাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। একইসঙ্গে সরকার নিজের দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের স্বার্থ রৰায় কাজ করছে। দেশের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করে সরকারের বিরম্নদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জোটের আরেক শরিক বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, সরকারের দেশবিরোধী কর্মকা-ের বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়াতে হলে চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করতে হবে। বিজেপি আগেও চারদলীয় জোটে ছিল, এখনও আছে ভবিষ্যতেও চারদলীয় জোটেই থাকবে_ এমন ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, চারদলীয় জোট ভাঙতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা জোটকে ধরে রেখেছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা জোটকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। কারণ চারদলীয় জোট শক্তিশালী হলেই আগামী নির্বাচনে মহাজোটকে পরাজিত করা সম্ভব। বিজেপির মহাসচিব শামিম আল মামুন বলেন, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার নামে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করতে চায়। আর জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করে সরকার চারদলীয় জোটকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। কাজেই এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জোটকে সক্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুকে চারদলীয় জোটের রূপকার উলেস্নখ করে বলেন, চারদলীয় জোট টিকে রাখার দায়িত্ব রয়েছে বিজেপির। এই দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রাখতে তিনি বিজেপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, দেশ আজ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আছে। সরকারপ্রধান দেশের কাউকে কিছু না জানিয়ে ভারত সফরে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছে। তাই দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যাতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণা বাসত্মবায়ন না হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনে চার দলসহ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারম্নক বলেন, বিজেপির কাউন্সিল সফল হবার মধ্যদিয়ে চারদলীয় জোট আরও শক্তিশালী হবে। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেই সরকারের দেশবিরোধী কর্মকা- প্রতিহত করা সম্ভব। বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, চারদলীয় জোট সক্রিয় থাকলে সরকার দেশবিরোধী চুক্তি করেও তা বাসত্মবায়ন করতে পারবে না। তিনি সরকারের দেশবিরোধী কর্মকা-ের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন করতে জোটভুক্ত দলগুলোর নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.