কুয়াশা কেটে উল্টো বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ ধোঁয়াটে by আরিফুর রহমান বাবু

চট্টগ্রাম থেকে শঙ্কা জেগেছিল কুয়াশায় সব না ভেসত্মে যায়। একটা সম্ভাব্য জমজমাট টেস্ট না ঘন কুয়াশায় ম্যাড়মেড়ে ড্র হয়ে যায় ? যেমন হয়েছিল, দু'বছর আগে একই মাঠে একই দলের সঙ্গে। প্রচ- ঝড় আর টানা ভারি বর্ষণে পাঁচ দিনের প্রায় তিনদিন ধুয়েমুছে গিয়েছিল।
আশার কথা, সে শঙ্কা কেটেছে। প্রায় দু'দিন কুয়াশার ঘন চাদরে ঢাকা সূর্য অবশেষে হেসেছে। আগের দু'দিনের বিশেষ করে দ্বিতীয় দিনের তুলনায় মঙ্গলবার অনেক বেশি সময় খেলা হয়েছে। সারাদিনে ৯০ ওভারের জায়গায় ৭০ ওভার খেলা হয়েছে। কিন্তু তাতে টাইগারদের তেমন লাভ হয়নি। বরং ভাগ্যাকাশ হয়েছে ধোঁয়াটে। তৃতীয় দিন শেষে খেলার যা অবস্থা তাতে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ভারত অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায়। টাইগারদের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের শঙ্কা। সেবাগ বাহিনী এরই মধ্যে ১২৩ রানে এগিয়ে। হাতে আছে ৯ উইকেট। বুধবার চতুর্থ দিনে এই লিডটাকে দ্রম্নত যতটা সম্ভব বড় করায় দৃঢ় প্রত্যয়ী ভারতীয়রা। তৃতীয় দিন শেষে আনুষ্ঠানিক মিডিয়া সেশনে কথা বলতে আসা জহির খানের কথা শুনে মনে হলো, আজ চা বিরতির আশপাশেই হয়ত আসবে ইনিংস ঘোষণা। দ্বিতীয় ইনিংসে সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়েই রান তুলছে ভারতীয়রা। রান তোলার গতি ঘড়ির কাঁটাকে হার মানিয়েছে। ১২২ রান উঠেছে মাত্র ২২.২ ওভারে।
ভারতকে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে টেস্টে সবচেয়ে কম ২৪৩ রানে বেঁধে ফেলার পর শাকিব বাহিনীর সামনে বুক চিতিয়ে লড়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় সে সম্ভাবনার প্রদীপ নিভু নিভু। অথচ একটু দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিলে হয়ত এমন হতো না। পুরো দৃশ্যপট অন্যরকম না হোক, অনত্মত প্রথম ইনিংসে লিড নেয়া যেত। দুঃখজনক হলেও সত্য, যারা ঐ সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বেলেছিলেন, সেই মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ নিজ হাতেই তা নিভিয়েছেন। এমন নয়, জহির খান, শ্রীশানত্ম, ইশানত্ম শর্মা ও অমিত মিশ্রর ভয়ঙ্কর কিংবা বিধ্বংসী বোলিংয়ে সম্ভাবনার মৃতু্য ঘটেছে। ওঁরা সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তুু মুশফিক ও রিয়াদ অনেকদূর এগিয়েও জায়গামতো পেঁৗছাতে পারেননি। একদম দোরগোড়ায় গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পরও ওঁরাই সব নষ্টের গোড়া নন। আসল ভিলেন আশরাফুল, রকিবুল ও অধিনায়ক শাকিব। সকালে চরম দায়িত্বহীন ব্যাটিং করে ওঁরা দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। তিন উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে দিন শুরম্ন করা বাংলাদেশ ঐ তিন মিডল অর্ডারের চরম ব্যর্থতায় মুখ থুবড়ে পড়ে। ৯৮ রানে খোয়া যায় ৬ উইকেট। শুরম্নতে না হলেও ঐ বিপর্যসত্ম অবস্থা থেকে ২৪৪ রান করা কিংবা টপকে যাওয়া কঠিনই ছিল। তখন মনে হচ্ছিল প্রায় ১০০ রানে পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও রিয়াদ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও বুক চিতিয়ে লড়াই করেন। আগের দিন টাইগার ক্যাপ্টেন শাকিব বলেছিলেন, ১০০ রানের একটা জুটি হলেই হয়ত ভারতের রান টপকে যাওয়া সম্ভব। মুশফিক-রিয়াদ অধিনায়কের ইচ্ছা পূরণের প্রাণপণ চেষ্টাই করেছেন। আশরাফুল, রকিবুল-শাকিবরা বড় জুটি গড়তে না পারলেও চরম খারাপ অবস্থায় মুশফিক-রিয়াদ ঠিকই দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে ১০৮ রানের বড় পার্টনারশিপও তৈরি করলেন। তাতে দু'দলের রান প্রায় কাছাকাছি চলে এলো। বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার সম্ভাবনাও হলো জাগ্রত। কিন্তু খুব কাছাকাছি গিয়েই ঘটল বিপত্তি। প্রথম ভুল পথে হাঁটলেন মুশফিক। প্রায় আড়াই ঘণ্টা (১৪৮ মিনিট) ধৈর্য ধরে হঠাৎ অধৈর্য হয়ে উঠলেন। লেগস্পিনার অমিত মিশ্রর ফাইটেড ডেলিভারিকে হঠাৎ সোজা ব্যাটে না খেলে মিড উইকেট ও মিড অনের মাঝখান দিয়ে তুলে মারতে গেলেন মুশফিক। বল সেখানে না গিয়ে উঠে গেল আকাশে। ৪৪ রানের ঐ ইনিংস শেষ হবার পর ছন্দপতন। এরপর কেন যেন বেপরোয়া হলেন রিয়াদও। মুশফিকের চেয়ে সাবলীল খেলা এ অলরাউন্ডার টেস্টে প্রথম পঞ্চাশে পা দিয়েই কেমন যেন হয়ে গেলেন। কেন যেন তড়িঘড়ি করতে গেলেন। সেটাই কাল হলো। শ্রীশানত্মর বলে ৬৯ রানে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেললেন। বাংলাদেশ তখনও মাত্র ৮ রান পিছনে। এর পরও লিড নেয়ার সুযোগ ছিল। সেটা হাতছাড়া হলো অভিষেক হওয়া সফিউলের অনভিজ্ঞতা ও অপরিপক্বতায়। ১০ নম্বরে ক্রিজে গিয়ে রয়েসয়ে খেলার বদলে বেশি মারার চেষ্টা করলেন। অমিত মিশ্রর বলে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর আবার মারতে গেলেন। সেটাই কাল হলো। বল চলে গেল পয়েন্টে ওত পেতে থাকা যুবরাজের হাতে। খুব কাছে গিয়েও ১ রানের জন্য ভারতকে ছোঁয়া হলোনা। এই না পাওয়াটা দিন শেষে আরও বড় হলো সেবাগ (৫৮ বলে ৪৫), গাম্ভীর (৫৬ বলে ৪৭) ও অমিত মিশ্রর (২১ বলে ২৪) আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। এ কারণেই দুই ঘণ্টারও কম সময়ে রান উঠল ১২২। প্রথম ইনিংসের মতো সেবাগ আবার শাকিব আল হাসানের শিকার। তবে এবার আর পঞ্চাশ পাড় হতে পারেননি, এই যা। বুধবার সকালে পেসারদের কাছ থেকে ব্রেক থ্রুর আশায় বাংলাদেশ। রাজিব, রম্নবেল _ সফিউলরা কিছু করতে পারবেন কিনা, তা নির্ভর করবে সকালে কুয়াশা থাকা না-থাকার ওপর। আসল ভরসা শাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনার কিছু করতে পারলেই কেবল ভারতীয়দের রান চাকা আটকে রাখা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.