অর্থসংস্থানের অনিশ্চয়তায় কমছে পদ্মা সেতুর রেলপথ by পার্থ সারথি দাস

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়নি দাতারা। তাই মূল সেতু প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে রেলপথ কমিয়ে আনা হচ্ছে। পরিকল্পনায় ছিল ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ হবে।
এখন ঢাকা-মাওয়া অংশ বাদ দিয়ে মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা অংশে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। গত ২৯ ডিসেম্বর সংকুচিত প্রস্তাবটি রেলওয়ে থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পিত ৮৩ কিলোমিটার রেললাইনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় প্রকল্প এলাকা কমিয়ে ব্যয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এই অর্থও জোগাড় না হওয়ায় সেতু চালুর দিন থেকে সংকুচিত পথেও রেল চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত নয় বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংকোচিত প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশীয় অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রস্তাবটি ২০১০-১১ সালের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ রেলওয়েকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পদ্মা সেতু চালুর দিনই রেল সংযোগ চালুর ব্যাপারে রেলওয়েও সচেষ্ট রয়েছে। সে কারণে পরিকল্পিত প্রকল্পটি আপাতত ছোট হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টিই অর্থায়নের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগ ও রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেললাইন বসানোর জায়গা রেখে সেতু তৈরিতে আগ্রহী হলেও উন্নয়ন সহযোগীরা রেললাইন স্থাপনের ব্যাপারে সাড়া দিচ্ছে না। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত থাকায় দাতারা রেলপথ বসানোর ক্ষেত্রে নতুন শর্তজুড়ে দিয়েছে। তারা বলছে, পদ্মা সেতুর নকশা অনুযায়ী রেলপথের জায়গা থাকবে, তবে এটি বাংলাদেশ সরকারকেই নির্মাণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতু নির্মাণের সঙ্গেই রেললাইন বসানো না হলে ভবিষ্যতে বসানো সহজ হবে না।
বর্তমান সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে তোড়জোড় চলছে। সে হিসেবে এ সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালে শেষ করার কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ করতে না পারলে আরো ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা পথে ৮৩ কিলোমিটার (পদ্মা সেতুসহ) নতুন ব্রডগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০১২ সালের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে এক হাজার ৮০ কোটি টাকার (১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সংস্থান রেখেছে। কিন্তু এ অর্থ পাওয়া যাবে কি না তা নিশ্চিত নয়। এ অর্থ মিললেও প্রাক্কলিত অর্থের বাকি তিন হাজার ৯০১ কোটি টাকার সংস্থান হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.