মেধা ও দক্ষতাই হোক চূড়ান্ত মাপকাঠি- সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, যা তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে—এটাই সবচেয়ে বড় তাৎপর্যের বিষয়।
সরকার বদলে গেলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যসহ উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক পদগুলোতেও পরিবর্তন ঘটে—এটা বাংলাদেশের এক দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। অথচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দলভিত্তিক রাজনীতি বা সরকার রদবদলের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কিন্তু সম্পর্ক আছে বললে কম বলা হয়, বরং বলতে হয়, সরকারদলীয় রাজনীতিই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও ক্যাম্পাসের প্রধান নিয়ন্ত্রক। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও এর বাইরে নয়। একটি দলের শাসনামলে তাদের সমর্থক বা অনুগ্রহভাজন লোকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় প্রতিপক্ষ দল ক্ষমতায় এসে তার চেয়ে বেশিসংখ্যক সমর্থককে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে। একজন সাবেক অধ্যাপক যেমনটি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতিতে নিজেদের ভোটারের সংখ্যা বাড়ায়।
মূল প্রবণতাটি যখন এই, তখন পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল করেছেন এমন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগের মধ্য দিয়ে মেধা ও দক্ষতার অগ্রাধিকার নিশ্চিত হয় না। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলের সঙ্গে একটি মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পদ্ধতি বর্তমানে চালু আছে। কিন্তু নিয়মটি ঠিকভাবে মানা হয় না; দলীয়করণসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ বিস্তর।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সুপারিশ করেছে, লিখিত ও মৌখিত পরীক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর যোগ্যতা পরীক্ষার (ডেমো লেকচার) ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত। অতি উত্তম সুপারিশ, বিশেষত ডেমো লেকচারের প্রচলন সারা বিশ্বেই আছে, এমনকি এ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ডেমো লেকচার ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ হয় না।
আমরা আশা করি, মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত মাপকাঠি হিসেবে মেধা ও দক্ষতার অপরিহার্যতা নিশ্চিত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.