জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার- একক নির্বাচনের ৰমতা অর্জন করম্নন এরশাদ

এক বছরের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তৃণমূল নেতাদের অসনত্মোষের মুখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন_ কি পেলাম, কি পেলাম না; এ কথা কেউ মুখে আনবেন না। কে মন্ত্রী হলো? কিংবা না পাওয়া নিয়ে যায়-আসে না। প্রতিষ্ঠিত হলে সব পাব।
আমরা মহাজোটে উপেৰিত নই। চাওয়া-পাওয়ারও কিছু নেই। দলকে শক্তিশালী করলে চাইতে হবে না। এমনিতেই সব পাওয়া যাবে। আপনারা মাঠ পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করম্নন। একক নির্বাচনের ৰমতা অর্জন করম্নন। চাওয়ার আগেই পাওয়া যাবে। মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মেছে, জাতীয় পার্টি সঙ্গে থাকলে মহাজোট ৰমতায় থাকবে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কয়েক মাসের মধ্যে চূড়ানত্ম করা হবে। বরিবার রাজধানীর নভো কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত দলের যৌথসভায় এ কথা বলেন মহাজোটের অন্যতম শরিক এই নেতা । সভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এরশাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর শুরম্ন হয় মুক্ত আলোচনা। এ পর্বে তৃণমূল নেতাদের অনেকটা তোপের মুখেই ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরম্ন করে তৃণমূল নেতাদের বেশিরভাগই মহাজোটে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, আওয়ামী লীগে প্রধান শরিক দলের নেতা এরশাদকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। কথা রাখেননি মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা। সরকার থেকে শুরম্ন করে সবখানেই জাতীয় পার্টিকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাহলে জাতীয় পার্টির মহাজোটে থেকে লাভ কি? তৃণমূল নেতাদের এমন প্রশ্ন ছিল এরশাদের প্রতি। তৃণমূল নেতাদের প্রশ্নের কোন জবাব দেননি এরশাদ। মাথা নিচু করে সবার বক্তব্য শুনেছেন তিনি। তাদের পরামর্শ, যেখানে জাতীয় পার্টি ও এরশাদকে মূল্যায়ন করা হবে সেখানে যাওয়া উচিত। সে দলের সঙ্গে জোট করা উচিত। জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কারণে বিভিন্ন এলাকার যোগ্য প্রার্থী_ যারা যুগ যুগ জাতীয় পার্টির নিবেদিতপ্রাণ তাদের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ কারণে নিজ দলের নেতাদের মনে হতাশা বাড়ছে। অন্যদিকে তৃণমূল নেতারা ছাড় দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এখন থেকেই বিভিন্ন আসনে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঠিক করার আহ্বান জানান তারা। এ নিয়ে বৈঠকে শুরম্ন হয় তুমুল হট্টগোল। যে যার মতো চিৎকার করে বিভিন্ন এলাকার অভ্যনত্মরীণ কোন্দলসহ সমস্যার কথা বলতে শুরম্ন করেন। তারা এরশাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। উত্তেজিত নেতাদের সানত্ম্বনা দেন এরশাদ। বলেন, যেসব জেলায় সমস্যা আছে, সব সমাধান করা হবে। তোমরা সম্মেলনের আয়োজন কর। আমি উপস্থিত থেকে সব সমস্যা সমাধান করে আসব।
এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে এরশাদ বলেন, ৬ জানুয়ারির মহাসমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি, জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমি এখন সবচেয়ে সুখী। নিরাশার প্রদীপ নিভে গেছে। এখন জাগরণের পথে জাতীয় পার্টি। আবারও জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে কাজ শুরম্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী চূড়ানত্ম করছি। মানুষ জাতীয় পাাির্টর প্রতিনিধি খোঁজে। কাকে ভোট দেবে তারা? ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন আসনে যোগ্য প্রার্থী চিহ্নিত করেছি। তাদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চূড়ানত্ম করা হবে। তবে প্রস্তুতির জন্য এখন থেকেই কাজ শুরম্ন করতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দলের মহাসমাবেশের পর জাতীয় পার্টির মর্যাদা আরও বেড়েছে। আগে কথা বললে মিডিয়া গুরম্নত্বের সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশ করত না। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও চুক্তি নিয়ে কথা বলায় সব পত্রিকায় গুরম্নত্বের সঙ্গে এ খবর ছাপা হয়েছে। এরশাদের বক্তব্যের যে মূল্য আছে, তা এখন প্রমাণিত।
তিনি বলেন, দুর্বলের সঙ্গে কেউ হাত মেলায় না। শক্তিশালীর সঙ্গে শক্তিশালীর বন্ধুত্ব হয়। এমন বন্ধুত্ব হলে, না চাইলেও সম্মান পাওয়া যাবে। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে একক নির্বাচন করার শক্তি অর্জন করতে হবে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা মাঠে যাও। শক্তি অর্জন কর। সামনে সুদিন। ভাল কিছু পাওয়ার জন্য অপেৰা করতে হয়।
এরশাদ বলেন, এখনও ২২ জেলায় সম্মেলন হয়নি। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল শেষ করার জন্য জেলা নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা শক্তি অর্জন করতে চাই। মৃতু্যর আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই। ইতোমধ্যে শক্তি অর্জনের অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। তিনি তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আশ্বাস দাও, জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবে? আমার শেষ আশা পূরণ করবে? তাহলে মরেও শানত্মি পাব। কথা রাখলেন সবাই। এরশাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করে গেলেন যৌথসভায় যোগ দেয়া সকল সত্মরের নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, আমরা জোটের বাইরে যেতে পারছি না। একক নির্বাচনের শক্তি অর্জন করতে হবে। তাহলে আমাদের কেউ উপেৰা করতে পারবে না। পৃথিবীজুড়ে জোটের রাজনীতি চলছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতির প্রবণতা বেশ। লাল কার্পেট বিছানো মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে যাবেন, পাশে এসে দাঁড়াবেন না, তা হতে পারে না। কারণ, আমরা মহাজোটের অংশ। আমাদের শক্তিশালী করতে আপনাদের ভূমিকা আছে। তাই বলি দূরে ছিলেন, কাছে এসে দাঁড়ান। বাইরে গিয়ে সমালোচনা করবেন, তা হতে পারে না। হতাশা কেটে গেছে। সামনে কুয়াশা নেই। কাছে আসুন। দলকে প্রতিষ্ঠিত করি। নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি বলেন, আপনারা আমার চালিকাশক্তি। শক্তি অর্জনের মূল উৎস। কিছু না পেয়ে সঙ্গে থাকায় আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের আরও সহযোগিতা চাই। এদিকে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির তেজগাঁও কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যৌথসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, সাইদুর রহমান টেপা, জিয়াউদ্দিন বাবলু, আহসান হাবিব লিংকন, মহাসচিব এবিএম রম্নহুল আমিন হাওলাদার ।

No comments

Powered by Blogger.