জিয়া ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ- জিয়ার জন্মবার্ষিকীর আলোচনাসভায় খোন্দকার দেলোয়ার

 বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে দল ও অঙ্গসংগঠন। এ উপলৰে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দলের নেতাকর্মীরা।
দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে ছিল আলোচনাসভা, খতমে কোরান, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচী ও ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিস। জিয়ার মাজারে ফুল দেয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়াও অঙ্গ সংগঠন জিয়া সাংস্কৃতিক সংস্থার (জিসাস) রক্তদান কর্মসূচী ও ধানের শীষ সংগঠনের ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিসের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। পরে তিনি দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডক্টর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এ সময় বেগম জিয়া বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে সারাদেশে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। ড্যাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিস দেয়া হচ্ছে, দলীয় নেতাকর্মীদের এই সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।
জিয়ার মাজারে ফুল দেয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, যারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক এটা চায় না, তারাই ষড়যন্ত্র করে জিয়াকে হত্যা করেছে। আর জিয়াকে হত্যার মধ্যদিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরম্ন হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়ার জন্মদিন উপলৰে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, জিয়ার জন্ম না হলে এবং স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা আমার জানা নেই। জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষক নন, মুক্তিযুদ্ধে সঠিক দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রতিবারের ন্যায় এবারেও চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দর্শক সারিতে বসা ছিলেন। কোন বক্তব্য রাখেননি তিনি। সভায় বিএনপির সহসভাপতি বিচারপতি টিএইচ খান সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, উপদেষ্টা সদস্য সাংবাদিক শওকত মাহমুদ ছাড়াও প্রফেসর ড. মাহবুবউলস্নাহ, কবি আব্দুল হাই সিদ্দিকী। উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, নজরম্নল ইসলাম খান, সহসভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা সদস্য ফজলুর রহমান পটল, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরবিক্রম, এম এ কাউয়ুম, মেজর জেনারেল (অব) রম্নহুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউলস্নাহ আমান, বরকত উলস্নাহ বুলু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, সাংসদ শাম্মী আখতার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নক।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সভায় বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সনত্মান বলছে, কিন্তু জিয়া ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো কিনা প্রশ্ন রাখেন তিনি। দেলোয়ার বলেন, সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার কাজ করেছেন বলেই তার কাল হয়েছে। জিয়াকে যারা সহ্য করতে পারেনি তারাই ১/১১ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই সরকার যাদের সহায়তায় ৰমতায় এসেছে তাদের সঙ্গে দেয়া ওয়াদা পূরণের জন্য দেশবিরোধী চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের এই মহাসঙ্কট থেকে জাতিকে উত্তলন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রম্নপের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুরম্নতর আহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে মহাসচিব বলেন, এই ঘটনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়ী। সুষ্ঠু তদনত্মের মাধ্যমে দোষীদের শাসত্মি দাবি করে তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে সুষ্ঠু বিচার না করলে সরকারই দায়ী থাকবে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ জিয়া যেখানে সফল হয়েছেন, সেখানে শেখ মুজিব ব্যর্থ হয়েছে বলেই জিয়াকে ভয় পায় আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এই সরকার জিয়া ও জিয়ার পরিবারের নাম মুছে ফেলতেই ইতিহাস বিকৃত করছে। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক তা মানতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এজন্যই পাঠ্যপুসত্মক থেকে সঠিক ইতিহাস তুলে দিয়েছে সরকার। অবিলম্বে সরকারের এই ষড়যন্ত্রের বিরম্নদ্ধে কঠিন ইস্পাত ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

জিয়ার মাজারে বিএনপি মহাসচিব যা বলেন
মঙ্গলবার সকালে শহীদ জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রতিক্রিয়া বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিগুলো বাসত্মবায়ন ছাড়া সরকারের কোন উপায় নেই। ভারতকে দেয়া ওয়াদা সরকারকে পূরণ করতেই হবে। দেশের জনগণ সরকারের রূপ চিনে ফেলেছে, জনগণ বসে থাকবে না। দেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের বিরম্নদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক এটা চায় না, তারাই ষড়যন্ত্র করে জিয়াকে হত্যা করেছে। আর জিয়াকে হত্যার মধ্যদিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরম্ন হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। শত্রম্নদের ষড়যন্ত্র একটার পর একটা দিনের পর দিন চলেই আসছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। তবে সফল হওয়ার জন্য সবরকম চেষ্টাই তারা করেছে। শুধু দেশী নয়, বিদেশী শত্রম্নরাও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ছিল এবং আছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বর্তমান সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা জনগণের আশা আকাঙ্ৰার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। যেভাবেই হোক ভারতের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে তা সরকার বাসত্মবায়ন করবে_ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলো বাসত্মবায়ন ছাড়া সরকারের তো উপায় নেই। ভারতকে দেয়া ওয়াদা তাদের পূরণ করতেই হবে। এই চুক্তি কখনও দেশবাসী মেনে নিবে না।
জিয়ার মাজারে ফুল দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আরএ গনি, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যন সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়ুম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব আমানউলস্নাহ আমান, বরকত উলস্না বুলু, মহিলা দলের নেত্রী শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.