পিএইচডি যখন পণ্য by একরামুল হক শামীম

 একাডেমিক ডিগ্রি হিসেবে পিএইচডি দেওয়া হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। ডক্টর অব ফিলোসফি ডিগ্রি প্রথম দেওয়া হয় ১১৫০ সালে প্যারিসের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে বর্তমানে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার আগে যেসব পূর্বশর্ত বিবেচনা করা হয়, এর মধ্যে একটি হলো গবেষণা।
প্রথমে পিএইচডিতে গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়নি। বর্তমান সময়ে যে ধরনের একাডেমিক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে এর শুরু উনিশ শতকে। জার্মানির হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন থেকে এই সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি জার্মানির এই একাডেমিক ধারা গ্রহণ করে। ১৯০০ সাল থেকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া শুরু হয় কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়-গুলোতে; এরপর ১৯১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এভাবেই একাডেমিক ডিগ্রি হিসেবে পিএইচডি ছড়িয়ে পড়ে। পিএইচডির ইতিহাস আলোচনার কারণটা এবার বলে নেওয়া যাক। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থের বিনিময়ে কেউ কেউ ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি কিনছেন বলে অভিযোগ উঠছে। অবশ্য এমন ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পিএইচডি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া পিএইচডি নিয়ে আলোচনা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রি কেনার অভিযোগ ওঠা। ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ওই কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। জানা যায়, আরইবির ওই কর্মকর্তা রাজধানীর জিগাতলার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি কিনেছিলেন। 'পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে' ধরনের ঘটনা ঘটেছে এ ক্ষেত্রে। পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে তিনি এমন একজনকে দেখিয়েছেন, যিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বর্তমান চেয়ারম্যান। ফলে ইউজিসি
সহজেই ভুয়া পিএইচডিধারীকে শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে ঘটনার শেষ এখানেই নয়। ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়ে আরইবিতে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পদোন্নতি পেতে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন খুব কম সময়ে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এর ফলে আরইবিতে কর্মরত পিএইচডি ডিগ্রিধারী সবাইকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকৃত পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এ ধরনের শঙ্কার সৃষ্টি হলে সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিকভাবেই।
আশঙ্কার কথা হলো, কর্মকর্তারা পিএইচডি গবেষণার জন্য সরকারের অনুমতি নিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি কিনছেন। প্রথমত পিএইচডি ডিগ্রি করার জন্য ছুটি নেন, তার ওপর সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় টাকা দিয়ে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি কেনেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের ভুয়া পিএইচডি নেওয়ার হিড়িক নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কাজের ধারা। তবে আশার কথা হলো, আরইবিতে কর্মরত ডক্টরেট ডিগ্রিধারী সব কর্মকর্তার সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউজিসি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আরইবির পাশাপাশি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি-না তা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। না হলে সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি পিএইচডি হবে আর সব পণ্যের মতো।
 

No comments

Powered by Blogger.