তিন বিঘা করিডোর বাসত্মবায়নে সক্রিয় ছিলেন জ্যোতি বসু- ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি by তাহমিন হক ববি

নীলফামারী থেকে জ্যোতি বসুর মহাপ্রয়াণে একটি ইতিহাস যেন অতীত হলো। নিছক একটি জীবন নয় আৰরিক অর্থেই শেষ হলো একটি যুগ। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষে একজন কমিউনিস্ট রাজনীতিকের এমন যুগ-পুরম্নষ হয়ে ওঠা নজিরবিহীন।
সেই বিরল গৌরবে জ্যোতিস্মান হলেন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বষর্ীয়ান জননেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তিনি আজ আর নেই। জ্যোতি বসু যেমন একজন ইতিহাস তেমনি তিন বিঘা করিডোর বাসত্মবায়ন তারই ইতিহাস। সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি এই করিডোর দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাসত্মবায়নে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন ১৯৯২ সালের ২৬ জুন। এ দিনে কুচবিহার ও লালমনিরহাট জেলার জেলা প্রশাসক দু'জন উপস্থিত থেকে করিডোর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তার আগে বিশাল আন্দোলন ছিল ফরোয়ার্ড বস্নকের কুচবিহারের কুচলিবাড়িজুড়ে। তারা গড়ে তোলে সুইসাইড স্কোয়াড। জান দেবো তবু করিডোর দেব না এমন সেস্নাগানে টানটান উত্তেজনায় ভরে ছিল এলাকা। ডাক দিয়েছিল হরতাল। সেখানে প্রতিদিন পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর সংঘর্ষ বাধত। তিন বিঘা করিডোর উদ্বোধনের ঠিক ১৫ দিন আগে ফরোয়ার্ড বস্নকের চরম বাধার মুখে জ্যোতি বসু জীবন বাজি রেখে এসেছিলেন কুচলিবাড়িতে জনসভা করতে। সে দিনের কথা আজ মনে করিয়ে দেয় জ্যোতি বসুকে বেশি করে।
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা নীলফামারীর একজন মফস্বল সংবাদদাতা হয়েও সাংবাদিকতার জীবনে আঙ্গরপোতা দহগ্রাম, তিন বিঘা করিডোর উন্মুক্ত করার আগে বাংলাদেশকে করিডোর দেয়ার বাধার যে আন্দোলন ভারতের কুচবিহারের কুচলিবাড়ি এলাকায় ফরোয়ার্ড বস্নক গড়ে তুলেছিল তার রিপোর্টিং প্রতিদিন সংগ্রহ করে তা পত্রিকায় প্রকাশের এক ধরনের দায়িত্ব আমার ওপর চেপে বসেছিল। এলাকাটি লালমনিরহাট জেলায় হলেও তিন বিঘা করিডোরের দূরত্ব ছিল নীলফামারীর কাছে।
১৯৯২ সালের ৯ জুন। সকাল বেলা খবর পেলাম ফরোয়ার্ড বস্নকের সব বাধা অতিক্রম করে সে সময়ের পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কুচলিবাড়ি আসছেন এবং বিকাল ৩টায় কুচলিবাড়ি স্কুল মাঠে ভাষণ দেবেন। এ খবর পেয়ে আমি ছুটে গিয়েছিলাম। কুচলিবাড়িতে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে তার কাছাকাছি বাংলাদেশ সীমানত্ম পর্যনত্ম রম্নখে ছিলাম। এপার বাংলা ওপার বাংলার সীমানত্মরৰীরা ছিল সর্তকাবস্থায়। কথা হয়েছিল তাদের সঙ্গে। আমাকে লুকিয়ে ভেতরে যাবার অনুমতি দেয়া হলেও সাহস পাচ্ছিলাম না ফরোয়ার্ড বস্নকের মারমুখী অবস্থানের কারণে। এরপরে খুব কাছে যেতে না পারলেও মাইকে জ্যোতি বসুর কথা যাতে শোনা যায় সেই পর্যনত্ম অগ্রসর হই। আর কিছুৰণের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এসে যাবেন এমন ঘোষণা চলছিল মাইকে। জ্যোতি বসু এলেন, চারদিকে করতালি আর বিজয়ের সেস্নাগান। ধীরে শানত্ম গলায় শুরম্ন করলেন জ্যোতি বসু তাঁর বক্তব্য। স্পষ্টভাষী তিনি বললেন ইন্দিরা গান্ধীকে এ দেশের সবাই ভালবাসেন। আমি জানি '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সকল জনগণ জান দিয়ে বাংলাদেশকে ভালবেসেছিল। শেখ মুজিবকে আমরা সবাই 'জয় বাংলা' বলে চিনতাম। সেখানে তিনি ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির কথা উলেস্নখ করে তাদের সম্মান দেখাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সে সময় তিন বিঘা করিডোরের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনকারীদের শানত্ম হতে বলেন। দশ মিনিটের ভাষণ শেষে তিনি ফিরে যান। সেদিনের কথা আমাকে আজ বেশি করে মনে করিয়ে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.